Take a fresh look at your lifestyle.

ইউক্রেইনে আটকে পড়া জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধির ২৮ নাবিক উদ্ধার

১৫০
অনলাইন ডেস্ক:ইউক্রেইনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘যোগাযোগ ও সম্পর্ক’ ব্যবহার করেই ওলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধির ২৮ নাবিক ও প্রকৌশলীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
জাহাজ থেকে উদ্ধারের পর তাদের একটি শেল্টার হাউজে নেওয়া হয়। সেখানে একটি বাংকারে অবস্থান নিয়ে সবাই ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন।

 

তিনি জানান শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে “জাহাজ থেকে নামার পর ২৮ জনকে একটি শেল্টার হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা এখনও সেখানেই আছেন। সবাই নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।”

যুদ্ধের মধ্যে আটকে পড়া বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে রকেট হামলায় থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মারা যান।

জাহাজের বাকি ২৮ নাবিক সেদিন থেকে বারবার তাদের নামিয়ে নেওয়ার আকুতি জানাতে থাকেন। সবশেষ বৃহস্পতিবার জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তাদের নামিয়ে নেওয়া হয়।

 

রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বলেন, “ইউক্রেইনে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা আমাদের সহায়তা করেছেন। আমরা খুঁজছিলাম কী উপায়ে নাবিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায়।

“তারা (প্রবাসী বাংলাদেশি) আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেখানকার বন্দর কর্তৃপক্ষও সহযোগিতা করেছে।”

এ কাজে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেন বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী।

“মূলত উদ্যোগটি সেখানেই (ইউক্রেইন) শুরু হয়। পরে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করে।

“তখন আমি দ্রুততম সময়ে ডিজি শিপিং এর সাথে কথা বলে ওনাকে বিষয়টি জানাই। এরপর সেই ইউক্রেইন প্রবাসীরা ডিজি শিপিং এর মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়।”

আনাম চৌধুরী বলেন, “কী উপায়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা জাহাজের নাবিকদের জাহাজ থেকে সরিয়ে নেবেন সেটা জেনে সরকার সন্তুষ্ট হবার পরই পুরো প্রক্রিয়া দ্রুত আগাতে থাকে।

“ওই বন্দরের আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি কয়েকজন নাগরিক এই উদ্যোগ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান ও ব্যবসার কারণে সেখানে ওই প্রবাসীদের ভালো যোগাযোগ আছে। বন্দরের সাথেও সম্পর্ক আছে

বিএমএমওএ’র সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসাইন। তিনি বলেন,  “নিহত নাবিকের মরদেহ সহ জীবিত নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনতে আমরা বিএসসি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে ইমেইল ও চিঠি পাঠাই।

“জাহাজ থেকে নাবিকরা জানাতে থাকেন, তাদের অবস্থা নিরাপদ নয় এবং অতিদ্রুত যেন তাদের উদ্ধার করা হয়। তখন আমরা নানা উপায় খুঁজতে থাকি। এসময় ইউক্রেইনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সংস্থা আমাদের প্রস্তাব দেয়।

তারা জানায়, নাবিকদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের জিম্মায় হস্তান্তর করতে পারবেন। তখন আমরা তাদের সাথে সরকারের যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেই। এভাবেই উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়।

সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, “পরবর্তীতে সেই প্রবাসী বাংলাদেশিরাই সেখানে ব্যাবসায়ীক সূত্রে গড়ে ওঠা নিজেদের যোগাযোগ সম্পর্ক ব্যবহার করে নাবিকদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।

নিরাপত্তাসহ অন্যান্য কারণে প্রবাসী ওই বাংলাদেশিরা পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী নন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই পুরো কাজটি তারা স্বেচ্ছা উদ্যোগে করেছেন। দেশীয় নাবিকদের উদ্ধারের সদিচ্ছা থেকে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিকদের সংগঠন বিএমএমওএ সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত জানান, পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস এখন  নাগরিকদের প্রত্যাবর্সনের বিষয়ে কাজ করছে

 

 

ইউক্রেইনের শেল্টার হোমে আশ্রয় নেওয়া নাবিকদের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড হয়ে ফেরানোর পরিকল্পনার কথা বৃহস্পতিবার প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে নাবিকদের উদ্ধারের গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়। শুক্রবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, নাবিকদের মলদোভা হয়ে রোমানিয়া নেওয়া হবে।

ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দর এলাকা থেকে মলদোভা সীমান্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে।

শেল্টার হোম থেকে নাবিকদের অন্য কোনো গন্তব্যে নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বলেন, “মুভ করার কথা ছিল। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি আপনারা জানেন।

“পথে সমস্যা থাকার কারণে তারা আর মুভ করেননি। সেখানেই আছেন। যখন তারা রওনা হবেন তখন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবকিছু দেখেই রওনা করা হবে।”

 

এর আগে শুক্রবার সকালে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. ওমর ফারুক তুহিন পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন শেল্টার হাউজের বাংকারে সবাই অবস্থান নিয়েছেন। এবং ২৮ জনের সবাই সুস্থ আছেন।

রাতে ওমর ফারুক তুহিনের ভাই ওমর শরীফ তুষার জানান, “ভাইয়ার সাথে মেসেজ আদান প্রদান হয়েছে। তারা ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন। সেখানেই আছেন। তাদের সাথে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার আছে।”

গত ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে রওনা হয়ে তুরস্কের ইরেগলিতে যায় ডেনিশ কোম্পানি ডেলটা করপোরেশনের অধীনে ভাড়ায় চলা বিএসসি’র মালিকানাধীন জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি।

 

সেখান থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ওলভিয়া বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে ছিল, পরদিন ইনার অ্যাংকরেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই বন্দর থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু সেদিন সকালেই রাশিয়ার অভিযান শুরু হয় ইউক্রেইনে।

Auto House

Leave A Reply

Your email address will not be published.