Take a fresh look at your lifestyle.

খেলার মাঠ রক্ষা করে বিকল্প স্থানে কলেজের ভবন নির্মাণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার: আধুনিক বরিশালের প্রাণপুরুষ মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত। এ কলেজের মাঠে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শিশু-কিশোরেরাও খেলাধুলা করে। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, বরিশাল কলেজের খেলার মাঠটিতে কিছুদিন ধরে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করা হয়েছে বললেন মনীষা চক্রবর্তী। সরকারি বরিশাল কলেজের শিক্ষার্থীদের একমাত্র খেলার মাঠ রক্ষা করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১০ জুলাই) বেলা ১২টায় সরকারি বরিশাল কলেজের তমাল তলায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে “মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত সরকারি বরিশাল কলেজের মাঠ রক্ষা কমিটি”।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের মাঠ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহ শাজেদা ও সদস্য সচিব মনীষা চক্রবর্তী, জাসদ বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হাই মাহবুব, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম, বাম গণতান্ত্রিক জোট বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক শাহ আজিজ খোকন, গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভংকর চক্রবর্তী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক টুনু রানী কর্মকার প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি বরিশাল কলেজ আধুনিক বরিশালের প্রাণপুরুষ মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত। এ কলেজের মাঠে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শিশু-কিশোরেরাও খেলাধুলা করে। তাছাড়া এ মাঠে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার স্মরণে অশ্বিনী মেলা, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও নানা উপলক্ষে সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়। এ মাঠের একপাশে মহাত্মা গান্ধীর হাতে লাগানো একটি তমাল গাছও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, বরিশাল কলেজের খেলার মাঠটিতে কিছুদিন ধরে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভবন নির্মাণের জন্য পূর্বপাশে কলেজের নিজস্ব জমিতে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, যেখানে সয়েল টেস্ট করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া কলেজের দ্বিতল-ত্রিতল ভবনগুলোকে ও বহুতল করার সুযোগ রয়েছে। বিকল্প স্থান থাকার পরও শিক্ষার্থীদের একমাত্র খেলার মাঠকে ধ্বংস করে বহুতল ভবন নির্মাণে কলেজ কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত আমরা কোনোভাবেই শিক্ষাবান্ধব মনে করতে পারি না ।

মনীষা বলেন, শিক্ষা মানে শুধু ঘরের মধ্যে বসে বই মুখস্থ করা নয়। শিক্ষা মানে শারীরিক, মানসিকভাবে একজন শিক্ষার্থীকে বিকশিত করে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সার্বিক আয়োজন। যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের জন্য শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি খেলাধুলার জন্য খেলার মাঠ, পুকুর ও গাছগাছালির প্রয়োজন আছে। বর্তমানে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের অভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে মাদকাসক্তি, মুঠোফোন আসক্তি, গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাংয়ের মতো সন্ত্রাসী বাহিনী।

তিনি বলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের এ খেলার মাঠের জায়গা সংকুলান করার জন্য মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছিল একসময়। অথচ ভবন নির্মাণের বিকল্প ব্যবস্থা থাকার পরও বিদ্যমান সেই মাঠকে ধ্বংস করে এমন গণবিরোধী পরিকল্পনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, ২০০০ সালের খেলার মাঠ ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণবিষয়ক আইনে ছাড়াও ২০১৪ সালের ৬ মে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সরকারকে বিদ্যমান সকল খেলার মাঠ রক্ষায় সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে, কার স্বার্থে, জনস্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে মাঠ ধ্বংসের উদ্যোগ নিচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তাই আমরা বরিশালের সচেতন নাগরিক সরকারি বরিশাল কলেজের শিক্ষার্থীদের এ একমাত্র খেলার মাঠ রক্ষা করার দাবিতে একত্রিত হয়েছি । গত ৭ জুলাই মাঠ রক্ষার্থে আমরা ১০১ সদস্যবিশিষ্ট মাঠ রক্ষা কমিটি গঠন করেছি।

মনীষা বলেন, আমাদের দাবি, বিকল্প স্থান থাকার পরও মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত সরকারি বরিশাল কলেজের একমাত্র খেলার মাঠ ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ বন্ধ করা, ক্লাসরুম সংকট নিরসনে বিকল্প স্থানে ভবন নির্মাণ করা এবং শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক বিকাশের উপযোগী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। আগামী ১৫ জুলাই সরকারি বরিশাল কলেজের একমাত্র খেলার মাঠ ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং জেলা প্রশাসক ও মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.