গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের কলাকাটা গ্রাম দিন দিন মাদক চক্রের ঘাঁটিতে পরিণত হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ অবস্থার জন্য দায়ী ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব আবু সুফিয়ান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাদক ব্যবসা ও বালু সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
স্থানীয়রা জানান, কলাকাটি গ্রামের বাসিন্দা হলেও আবু সুফিয়ান ঢাকায় থাকেন। তবে তিনি নিজে না থেকেও ভাতিজা বিজয় ও ভায়রা হাবিবুর রহমানকে দিয়ে গোবিন্দগঞ্জের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের মাধ্যমে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য গ্রামের পর গ্রাম ছড়িয়ে পড়ছে।
অভিযোগ আছে, বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ সহজে মুখ খুলতে চান না। ভয়ভীতি, হামলা কিংবা জীবননাশের আশঙ্কা থেকেই সবাই চুপ থাকেন।
মাদক ব্যবসার পাশাপাশি আবু সুফিয়ান শালমারা ইউনিয়নের বালু সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়রা বলেন, তিনি অবৈধভাবে নদী থেকে বালু তুলে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছেন।
এছাড়া, ভিজিডি কার্ড দেওয়ার নামেও প্রতারণা করেছেন তিনি। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তিন থেকে চার হাজার টাকা নেওয়ার পরও কার্ড দেননি।
এলাকাবাসীর দাবি, তার নিয়ন্ত্রণে কলাকাটা গ্রাম পুরোপুরি মাদক চক্রের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। যুবসমাজ ধ্বংসের পথে গেলেও প্রশাসন নীরব। কেউ প্রতিবাদ করলে ভয় দেখানো, মারধর কিংবা জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এ অবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে সম্প্রতি কলাকাটা গ্রামের প্রায় ১০০ মানুষ স্বাক্ষর করে আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগপত্রটি গাইবান্ধা সেনা ক্যাম্পের পাশাপাশি জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও দেওয়া হয়েছে। এতে তার মাদক ব্যবসা, বালু সিন্ডিকেট ও কার্ড বাণিজ্যের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন আবু সুফিয়ান। ঢাকায় বসে এখন তিনি শুধু মাদকই নয়, বালু ও কার্ড বাণিজ্যেরও মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করছেন।
কলাকাটা গ্রামের সাকিব হাসান নামে এক ভুক্তভোগী জানান, আবু সুফিয়ান আমার সম্পর্কে কাকা হলেও ভিজিডি কার্ড দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকেও তিন হাজার টাকা নিয়েছে। এখন টাকাও নেই ভিজিডি কার্ডও নেই। আমাদের এলাকাটা শেষ করে দিচ্ছে, প্রতিনিয়ত দিনে রাতে এখানে গাজার ব্যবসা হয়।
নিলি বেগম নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, ওরা গাজার ব্যবসা করে। আমার ছেলেরা ওর মাদক ব্যবসায় বাধা দিয়েছিল বিধায় আমার পাঁচ জন ছেলেকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে আবু সুফিয়ানের বাহিনী। পরে আমার বাড়িঘর ভেঙে দিতে ধরলে পাশের এলাকার কয়েকজনের বাধায় তা কোনমতে রক্ষা হয়।
সোহাগ, টুকু মন্ডল ও সেকেন্দার আলী জানান, একদিকে সে মাদক ব্যবসায়ী অন্যদিকে সে প্রতারক। আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভিজিডি কার্ড দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে কিন্তু কার্ডও দেয়নি টাকাও আর দেয়নি। তার মাদক ব্যবসার কারণে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ। গ্রামের মানুষজন ভয়ের কিছুই বলতে পারছে না। কেউ কিছু বললেই তাকে ভয় ভীতি দেখানোসহ মারধর করা হয়। মাদক ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
জাহিদুল ইসলাম নামে সালমারা ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির এক সদস্য জানান, আবু সুফিয়ান হঠাৎ বিএনপি নেতা সেজে কার্ডের টাকা নিচ্ছে, বালু সিন্ডিকেট ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে। ওর এক চাচাতো ভাই ২৭ কেজি গাঁজাসহ ধরা পড়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। নিজে ঢাকায় থেকে আপন ভাতিজাকে দিয়ে মাদক ব্যবসা করাচ্ছে। আবু সুফিয়ানের আরও কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন এই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত, নাম বললে আমি এই গ্রামে থাকতে পারবো না। আত্মীয়-স্বজনকে কাজে লাগিয়ে টনকে টন পাইকারি গাঁজা বিক্রি করছে এই আবু সুফিয়ান।
তিনি আরও বলেন, আবু সুফিয়ানের অনেক ক্ষমতা! কেউ কিছু বলতে পারেনা। আমার কাছেও পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। আবু সুফিয়ানের ভায়রার নামে এখনো চারটি মাদক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কলাকাটা গ্রামকে মাদক মুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত শালমারা ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব আবু সুফিয়ান মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একটি পক্ষ এসব অভিযোগ করেছে। আমি কোন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নই।
এব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহমেদ জানান, এর আগে এ ধরনের অভিযোগ আমি পাইনি। এ ব্যাপারে আমি আবু সুফিয়ানের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাবো।