Take a fresh look at your lifestyle.

বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির বিতর্কিত কালচারাল অফিসার অসিতকে শাস্তিমূলক বদলি

স্টাফ রিপোর্টার॥ বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির বিতর্কিত কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশগুপ্তকে হঠাৎ করে কুড়িগ্রামে বদলি করা হয়েছে।

বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, অনিয়ম দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা সহ নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাকায় গত সোমবার ( ১৩ই অক্টোবর) দিবাগত রাতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাসচিব মোঃ ওয়ারেছ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে কালচার অফিসার অসিত বরণ দাশগুপ্তকে কুড়িগ্রামে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।

তার বদলির খবর ছড়িয়ে পড়লে কীর্তনখোলার তীরের শিল্প সমাজে একপ্রকার স্বস্তি নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই খবরে শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ‘হাফ ছেড়ে বাঁচার’ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অসিত বরণ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে বরিশালে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পর বরিশালে পদায়ন পাওয়া এই কর্মকর্তা শুরু থেকেই বিতর্কে জড়ান। চলতি বছরে ১২ ই জানুয়ারি বরিশাল শিল্পকলায় কালচার অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হয়ে অবৈধভাবে রেস্ট হাউজ দখল করেন যা তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রাথমিক পর্যায়। হল ভাড়া থেকে শুরু করে নামে-বেনামে একাধিক অনুষ্ঠান করে হরিরলুট করেন অসিত। যার ফলে বরিশাল শিল্পকলার ফান্ডের অর্থ শূন্যের পথে ধাবিত হয়।

এছাড়াও গত ৩০শে জুন সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে অসিত। এতে একাডেমিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রশিক্ষকদের অভিযোগ, বরিশালের সাবেক কালচারাল অফিসার হাসানুর রশীদ ১২ জন প্রশিক্ষকের ২০২৪-২৫ সালের চুক্তি নবায়নের প্রস্তুতি রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু অসিত বরণ দায়িত্ব নেয়ার পর চুক্তি নবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন এবং নতুন প্রশিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেন।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ১ জুলাই গণমাধ্যমকর্মী মুহম্মদ ইমন খন্দকার হৃদয় লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ওয়ারেছ হোসেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, এবং দুদকের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. এইচএম আক্তারুজ্জামানের বরাবর।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, অসিত বরণ দাশগুপ্ত ২০১৩ সালে কালচারাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই সিলেট, হবিগঞ্জ ও বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম ও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন। ২০১৬ সালে সিলেটে নারী ঘটিত একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, যা পরবর্তীতে গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়। ২০২৪ সালে সিলেটে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ হয়, এবং ২০২৫ সালে তাকে বরিশালে বদলি করা হয়। বরিশালে যোগদানের পর তিনি সরকারি রেস্ট হাউজে পরিবারসহ অবৈধভাবে বসবাস করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেন।

এছাড়া হলরুম ভাড়ার টাকা গোপন রেখে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ এবং সাধারণ ফান্ড থেকে প্রায় ২৯ লাখ টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) উপমা ফারিসাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গত ৮ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে এবং সূত্রমতে, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরপরই কর্তৃপক্ষ তার বদলির সিদ্ধান্ত নেয়।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, “এটি এক ধরনের শাস্তিমূলক বদলি।” সূত্রটি আরও জানায়, সোমবার শিল্পকলা একাডেমি সারা দেশের অন্তত ১৯ জেলার কালচারাল অফিসারকে বদলির আদেশ দেয়। নির্দেশে বলা হয়, কর্মকর্তাগণকে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে, নতুবা ওইদিন থেকেই তারা অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন। বদলির বিষয়ে জানতে অসিত বরণ দাশগুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে জেলা প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায় যে, অসিত বরণকে কুড়িগ্রামে বদলি এবং বরিশালে পটুয়াখালীর কর্মরত কালচার অফিসার তানবীর রহমানকে নতুন কালচারাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনে বরিশালের শিল্পী সমাজে স্বস্তি ও আশাবাদ লক্ষ্য করা গেছে।

তারা জানান, অসিত বরণ বরিশালে যোগদানের পর থেকেই একাডেমিকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করতেন। রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ান এবং ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে শিল্পীদের অর্থ আত্মসাৎ করেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী ও গণমাধ্যমকর্মী মুহম্মদ ইমন খন্দকার হৃদয় বলেন, “সত্যের জয় সবসময় হয়। অসিত চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ— সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তাই সে বদলিমূলক শাস্তি পেয়েছে। কিন্তু সে যে লক্ষ লক্ষ টাকা চুরি করেছে, তার বিচার এখনো হয়নি। অসিত সিলেটে চুরি করেছে, বরিশালেও করেছে কুড়িগ্রামেও করবে। কর্তৃপক্ষের উচিত তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।”

তিনি আরও বলেন, “বরিশাল শিল্পকলা এই জেলার মানুষের আবেগের স্থান। এটাকে সুন্দর ও দুর্নীতিমুক্ত রাখা আমাদের দায়িত্ব। নতুন কর্মকর্তা যদি একই পথ অনুসরণ করেন, তবে তার বিরুদ্ধেও আমি লড়ব। আমি থাকতে বরিশাল শিল্পকলায় কোনো দুর্নীতি হতে দেবো না।”

Auto House

Leave A Reply

Your email address will not be published.