Take a fresh look at your lifestyle.

বারবার ভুল সিদ্ধান্তে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিএনপি

বিশেষ প্রতিবেদকঃ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার একগুয়েমি সিদ্ধান্তে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিএনপি। নেতাদের সমন্বয়হীনতায় হতাশ মাঠপর্যায়ের বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গত দেড় মাস ধরে চলা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিতে এরই মধ্যে ‘ঢিলেঢালা’ ভাব দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে না পারলেও, সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকতে পারত। তাদের দাবিগুলো দেশের মানুষ আরও গুরুত্বসহকারে শুনতো।

গত ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের লক্ষ্যে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিএনপি।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছিলেন, ২৮ অক্টোবরই শেখ হাসিনার ক্ষমতার শেষ দিন। শীর্ষ নেতাদের শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জ্বালাময়ী বক্তব্যে সারাদেশ থেকে বিএনপির কর্মী সমর্থকেরাও ছুটে এসেছিল নয়া পল্টনে। কিন্তু ফলাফল হয়েছে উল্টো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবি জানানো হলে এর প্রতিক্রিয়া যে কঠোর কিছু হবে, তা অবধারিতই ছিল। কিন্তু কঠোর পরিস্থিতি এলে বিকল্প কর্মসূচি কি হবে,কিভাবে দাবি আদায় করা যাবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা তাদের ছিল না।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচীর পথে হাঁটে বিএনপি। কর্মসূচি সফল করতে দেশজুড়ে চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা, যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, সরকারি সম্পদ ধ্বংস ইত্যাদি জনবিরোধী কার্যক্রম চালায় বিএনপির নেতা কর্মীরা। ফলাফল আসে হিতে বিপরীত, বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সাধারণ মানুষ।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি অংশগ্রহণ না করে বরং হরতাল-অবরোধের মতো জনবিরোধী কর্মসূচীর দিকে এগিয়েছে। আজকের দিনে বিএনপি হরতালের ডাক দিচ্ছে, যা কেউ মানছে না। অবরোধের ডাক দিচ্ছে, যা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে দলীয় নেতা কর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুটা চিন্তিত। এর কারণ বের করে জেলার মূল নেতা-কর্মীদের কর্মসূচিতে আরও সক্রিয় করতে দুজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ঢাকা মহানগরসহ প্রায় সব সাংগঠনিক জেলার বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি কথা বলেছেন। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সব বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলার শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন।

বিএনপির চলমান আন্দোলন-কর্মসূচির কৌশল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মধ্যেও ভিন্নমত আছে। অনেক দল মনে করে, বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনার ছকের অভাবে আন্দোলন মার খাচ্ছে। তাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ নিয়ে বিএনপির কয়েক ধাপের যে পরিকল্পনা থাকা দরকার ছিল, তা ছিল না। মহাসমাবেশের নিরাপত্তার বেষ্টনীর জন্য কাকরাইল-বিজয়নগর এলাকায় যে পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবক রাখার দরকার ছিল, তা রাখা হয়নি। আবার এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য পূর্বপ্রস্তুতিও ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা লেন, ‘আমরা বিএনপিকে মহাসমাবেশ নিয়ে সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথা কানে তুলেনি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের উত্থানের পেছনে সাধারণ মানুষের সমর্থনের পাশাপাশি দলীয় নেতা কর্মীদের অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার গল্প থাকে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের ধ্বংসের জন্য হাতে গোণা দু’একটি কারণই যথেষ্ঠ। যখন একটি রাজনৈতিক দল একবার নয়,দুবার নয় বারংবার ভূল সিদ্ধান্ত নিয়ে দল পরিচালনা করে তখন তার ধ্বংস অনিবার্য। ভূল সিদ্ধানের কারণে প্রথমে জনসম্প্রিক্ততা হারায় দলটি,একসময় কর্মী সমর্থকেরাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। আজকের বিএনপিরও অবস্থা একই রকম। বারংবার ভূল সিদ্ধানের কারণে দলটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’

এদিকে বিদেশি প্রভূদের উপর ভর করে বিকল্প পথে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধিদের বিচার বন্ধে জামাত যে বিদেশি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল তাতে জোর সমর্থন ছিল বিএনপির। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির বিদেশ নির্ভর রাজনীতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তো দেখাই যাচ্ছে,কীভাবে বিএনপি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সুরে সুরে কথা বলছে, কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দেয়া,গোপনে বা প্রকাশ্যে বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণের মতো ঘটনাও কারও অজানা নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির ধারণা বিদেশিরা হয়তো নানামূখী চাপ প্রয়োগে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বাধ্য করবে আর তাদের কোলে তুলে নিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসিয়ে দেবে। বিএনপির বুঝা উচিৎ ছিল বিদেশীরা নিজ স্বার্থ ব্যতীত কোন পদক্ষেপই নেয় না, যে সুযোগ সুবিধার কথা বলে বিদেশীদের নিজেদের পক্ষে কাজ করানোর চেষ্টা করছে বিএনপি,সেই সুযোগ সুবিধা যদি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে তারা পায় তাহলে বুমেরাং হতে তারা একটুও সময় নিবেনা।’

এভাবে বিদেশ নির্ভর রাজনীতির উপর মাত্রাতিরিক্ত অগ্রাধিকারের ফলে বিএনপির মাঠের রাজনীতি দিন দিন নষ্ট হয়ে গেছে। দলীয় সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। আর বিএনপির আজকের এই করুণ দশার অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত বিদেশ নির্ভরতা বলেও মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.