Take a fresh look at your lifestyle.

শেবাচিম হাসপাতাল কর্মচারীদের হামলার শিকার-স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার আন্দোলনকারীরা

১৭

স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার দাবির আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালিয়েছে বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের কর্মচারীরা।

১৪ আগস্ট,বৃহস্পতিবার সকালে শেবাচিম হাসপাতালের কর্মচারীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে ধরে কিলঘুষি ও মারধর করে।

এরপর হাসপাতালের কর্মচারীরা কর্মবিরতির ডাক দিয়ে বিক্ষোভ করে হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে নেয়। এতে আন্দোলনকারী ও আমরণ অনশন করা তিন শিক্ষার্থী অনেকটা সটকে পড়েছে।

আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের উষ্কানিতে হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।

নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি করে তিনি বলেন, আন্দোলন চলবে।

এই ঘটনায় আহত ও নিখোঁজের সংখ্যা পরে বিবৃতির মাধ্যমে জানাবেন বলে জানিয়েছে রনি। শেবাচিম হাসপাতালে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে বুধবার রাতে আন্দোলনকারীদের একাংশ তাদের কর্মসূচী ৩০ দিনের জন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর আগে গত সোমবার থেকে শেবাচিম হাসপাতালের সংস্কারে ৭ দফা দাবিতে অনশনে বসেছিল শিক্ষার্থীরা।

একই দাবিতে ১৮ দিন ধরে মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছে জনসাধারণ।

দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, রোগীদের হয়রানি এবং স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভাঙার দাবিতে এই আন্দোলন চলছে।

এরই মধ্যে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মো. আবু জাফর শেবাচিম হাসপাতালের জরুরী গেটে অনশনকারীদের কর্মসূচী প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও তা মানেনি। উল্টো বৃহস্পতিবার থেকে মহাসড়ক অবরোধের পরিবর্তে শেবাচিম হাসপাতালে গণঅনশনের ডাক দেয়। এরপর কর্মস্থলে নিরাপত্তা চেয়ে এর পাল্টা জবাবে বিক্ষোভের ডাক দেয় শেবাচিম হাসপাতালের কর্মচারীরা।

এর আগে শেবাচিম হাসপাতালে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আবু জাফর বলেছিলেন, ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের তিন দফা দাবি স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশে রয়েছে’। অযৌক্তিক এই আন্দোলন বন্ধ না করলে আইন শৃংখলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছিলেন তিনি।

এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। দুপুর ১২টার দিকে কর্মচারীরা অনশনকারীদের সরে যেতে বলে। কিন্তু তা না শুনলে কর্মচারীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে কয়েকজনকে বেধরক মারধর করে কর্মচারীরা।

 কর্মচারীরা হাসপাতাল কম্পাউন্ড এবং সামনের বান্দ রোডে বিক্ষোভ করেন। এসময় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়া হয়। আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক মহিউদ্দিন রনিকে উদ্দেশ্য করে ‘হইহই রইরই, রনি তুই গেলি কই। রনির দুই গালে জুতা মারো তালে তালে।’ এমন শ্লোগান দেওয়া হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত হাসপাতালে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আনসার সদস্যরা হাসপাতালের প্রধান গেট আটকে চলাচল সীমিত করেছে।

হাসপাতালের কর্মচারী আমিনুল সোহেল বলেন, অযৌক্তিক আন্দোলনের নামে তারা হাসপাতালের সেবা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আমাদের মহাপরিচালক এসে তাদের দাবি মেনে নিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও তারা তা শোনেনি। যেকারনেণ আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করা হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার দাবিতে চলমান আন্দোলনের সংগঠক নাভিদ নাসিফ বলেন, আমাদের উপরে আক্রমণ করেছে কর্মচারীরা। অনশনরতরা মেডিকেল টিমের সহায়তাও পাচ্ছে না। কমচারীরা যেভাবে হুংকার দিয়েছে তাতে তারা শংকিত। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে কোন নির্দিষ্ট মহল বরিশালবাসীর এই আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বুধবারের সভায় আমাদের কোন প্রতিনিধি ছিলেন না। তাই আন্দোলন প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। যারা আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা বলছে তারা কয়েকদিন আগে যুক্ত হয়েছিল বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশালে এসে মতবিনিময় সভা করেছেন্ সেখানে আমাদের ডাকা হয়নি। তবে সভায় তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন অযৌক্তিক। তিনি এই আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এমন উস্কানিতেই আজ আমাদের নিরীহ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচিতে এমন হামলা হয়েছে।

রনি বলেন, একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে তার (মহাপরিচালক) এমন উক্তি সেই ২০২৪ এর আগের কথারই প্রতিধ্বনি। ওই সময় আন্দোলন দমনে এমন ভাষায় কথা বলা হতো। এ জন্য আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার চাই। হামলারকারিদের বিচার দাবি ও আগের তিনদফা দাবির সঙ্গে হামলার ঘটনার বিচার যুক্ত হয়ে এখন থেকে চার দফা আন্দোলন চলবে। এ জন্য অচিরেই আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।

রনি আরও বলেন, শেবাচিম হাসপাতালের ইনিফর্ম পরে কর্মচারীরা এই হামলা করেছে। এসময় অনেকে জয় বাংলা স্লোগানও দিয়েছে। এই হামলায় অনশনরত স্কুল ও মাদ্রাসার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর জখম হয়েছে। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। ভয়-ভীতি ও হুমকির কারণে আহতদের চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। তবে যত ভয়-ভীতি, হামলা চালানো হোক না কেন, আমাদের আন্দোলন চলবে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বেল্লাল হোসাইন জানান, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কাউকে আটক করা হয়নি।

Auto House

Leave A Reply

Your email address will not be published.