Take a fresh look at your lifestyle.

কপালে টিপ পরা নিয়ে শিক্ষককে লাঞ্চিত করায়- সেই পুলিশ কনস্টেবল সাময়িক বরখাস্ত

অনলাইন ডেস্ক: সোমবার বিকালে পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অভিযোগকারিনীর সাথে বাক বিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়ার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করায় তাকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।”

দুদিন আগের ওই ঘটনা খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) ফারুখ হোসেন।

পুলিশের প্রটেকশন বিভাগের একজন অতিরিক্ত উপ কমিশনার এবং তেজগাঁও বিভাগের একজন সহকারী কমিশনারকে নিয়ে গঠিত ওই তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

টিপ পরায় পুলিশের হেনস্তার শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকার তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ

বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

পুলিশের পোশাক পরা একজনের বিরুদ্ধে ‘ইভটিজিং’ এবং ‘প্রাণনাশের চেষ্টা’র অভিযোগ করা হয় ওই জিডিতে।

সেই খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। হেনস্থাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার সংসদে দাবি জানান সংসদ সদস্য, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা।

এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সোমবার সকালে জানান, ওই পুলিশ সদস্যকে তারা চিহ্নিত করেছেন।

নাজমুল তারেক নামের ওই কনস্টেবল ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রটেকশন বিভাগের কর্মরত এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম তখন জানান।

পরে নিজের কার্যালয়ে এক অনির্ধারিত ব্রিফিংয়ে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, “ওই কনস্টেবলের সাথে কথা বলে আমরা জেনেছি, ওই সময় একটি ঘটনা ঘটেছে, আমরা শিক্ষকের করা জিডি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দেখছি।”

কী ঘটনা ঘটেছিল, টিপ পরা নিয়ে কী হয়েছিল, সেই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, তদন্তের প্রয়োজনে সবার সাথে কথা বলা হবে।”

শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম রোববার  বলেছিলেন,ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও সংগ্রহ করে তারা বিশ্লেষণ করেছেন। প্রাথমিকভাবে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ সদস্য মনে হলেও তারা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না।

ওই এলাকায় কোন কোন ইউনিটের পুলিশ সদস্য সেদিন ডিউটিতে ছিলেন, তার একটি তালিকা তৈরি করা হয় দোষী ব্যক্তিকে শনাক্ত করার জন্য। তাছাড়া শিক্ষক লতা সমাদ্দার মোটর সাইকেলের যে নম্বর পুলিশকে দিয়েছেন, সে ব্যাপারেও তদন্ত চালিয়েছিলেন তারা।

শেষ পর্যন্ত কনস্টেবল নাজমুল তারেককে কীভাবে শনাক্ত করা হল জানতে চাইলে সোমবার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তারা মোবাইল ফোন, সিসি ক্যামেরার ভিডিও এবং ‘বিভিন্ন সোর্সের’ মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে তাকে শনাক্ত করেছেন।

“ঘটনার দিন এবং রোববারও দায়িত্ব পালন করেছেন কনস্টেবল নাজমুল। আমাদের তিনি বলেছেন, তাকে নিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সেটা তার জানা ছিল না।”

থানায় দেওয়া অভিযোগে লতা সমাদ্দার লিখেছেন, শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা থেকে রিকশায় ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমার সামনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে তেজগাঁও কলেজে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন।

তখন সেজান পয়েন্টের সামনে থেমে থাকা একটি মোটরসাইকেলের উপর পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি বসে ছিলেন। ওই মোটরসাইকেলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই ব্যক্তি লতার কপালে টিপ পরা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন।

এক পর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি। পেছনে ফিরে ঘটনার প্রতিবাদ করায় ফের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় শিক্ষক লতাকে। তাকে উদ্দেশ্য করে ‘টিপ পরছোস কেন’ মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি।

লতার অভিযোগ, তিনি প্রতিবাদ করায় পুলিশের ওই সদস্য মোটরসাইকেল চালিয়ে তার গায়ের উপর উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সরে গিয়ে রক্ষা পেলেও আহত হন তিনি। পরে পাশেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে তিনি বিস্তারিত জানান এবং তাদের পরামর্শে থানায় গিয়ে জিডি করেন।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উপ কমিশনার বিপ্লব বলেন, যে মোটর সাইকেলের নম্বরটি লতা সমাদ্দার জিডিতে উল্লেখ করেছেন, সেটি যশোর থেকে রেজিষ্ট্রেশন করা এবং কাগজপত্র বৈধ বলে প্রাথমিকভাবে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

পুলিশ কনস্টেবলকে শনাক্ত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লতা সমাদ্দার  বলেন, “গায়ে দায়িত্বশীল পোশাক পরে, বা যে কেউ, বা যে কোনো পুরুষ মানুষ নারীদের যৌন হেনস্তা কিংবা তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হানতে না পারে, সে বিষযটি দেখতে হবে।

“নারীরা যাতে সাবলীলভাবে সুন্দরভাবে চলাফেরা করতে পারে, ইভটিজিংয়ের শিকার যেন না হয়। তার (কনস্টেবল) যতটা শাস্তি হওয়া দরকার, ততটাই যেন হয়।”

ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করবেন কি না জানতে চাইলে লতা বলেন, স্বামীর সাথে কথা বলে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.