ভোলার লালমোহন উপজেলার গজারিয়া বাজারে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট।এ হাটে সারা বছর নৌকা তৈরী হলেও শুস্ক মৌসুমে কেনা-বেচা জমে উঠে।
গড়ে প্রতি মাসে বিক্রি হয় অর্ধ-কোটি টাকার নৌকা। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলে আসছে এই নৌকার হাট। এই নৌকা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ২ শতাধিক শ্রমিক-কারিগর।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে মাছ বেশি ধরা পড়লে নৌকা কেনাবেচা হয় বেশি।এখানকার কারিগরদের তৈরীককৃত নৌকা চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে লক্ষীপুর,নোয়াখালী,হাতিয়া মনপুরা,চর কুকরী- মুকরী,বরিশালে মেহেন্দিগঞ্জ, খুলনা এসকল অঞ্চলের ক্রেতা বেশি জানিয়েছেন বিক্রেতারা।সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও সরকারি বেসরকারি দপ্তরের কোন নজরদারি নেই।যার ফলে এ শিল্পের তেমন প্রসার ঘটেনি।
এই নৌকার হাটের কারিগর ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দ্বীপজেলা ভোলার ২ লাখের অধিক জেলে মাছ শিকার করে।এ মাছ শিকারের প্রধান বাহন হচ্ছে নৌকা-ট্রলার।এ ছাড়াও উপকূলের বিছিন্ন চরগুলোতে খেয়া পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকাই। তাই এ জেলায় নৌকার কদর অনেক বেশি।কিন্তু সেই নৌকা-ট্রলার নির্মানে বড় কোন প্রতিষ্ঠান না থাকলেও লালমোহন উপজেলার পরে সব চাইতে বড় বাজার গজারিয়াতে তৈরী হচ্ছে নৌকা-ট্রলার।
প্রতিদিন শতাধিক কারিগর বা মিস্ত্রী তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করেন।এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে শ্রমিক ও কারিগরদের।এ নৌকা তৈরীতে যন্ত্রপাতিসহ কাঁঠ, পেরেক, হাতুড়ি – বাটাইল।যন্ত্রচালিত করাতের শব্দ মুখরিত নৌকার হাট।নৌকা তৈরীর কারিগর পরেশ মিস্ত্রি,গনেশ মিস্ত্রি,মনির ও নাগর জানান,আমরা অনেক বছর ধরে নৌকা তৈরীর কাজ করছি। আগে দৈনিক মজুরি কম ছিলো, এখন সবকিছু দাম বাড়ছে।তাই এখন পাচ্ছে দৈনিক জন প্রতি ৯’শ টাকা করে।
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এই খানে অনেকেই নৌকা কিনতে আসেন। এখানেই নৌকা তৈরী হয় আবার এখান থেকেই বিক্রি হয়। প্রতিটি নৌকা আকার ও প্রকারভেদে গড়ে ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
নৌকা তৈরীর কাজে শ্রমিক মিলন,সুমন,কান্ত চন্দ্র মিস্ত্রি জানান, আকার এবং আয়তন ভেদে নির্ভর করে কোন নৌকা তৈরীতে কত সময় এবং কি কি উপকরন লাগে। একেকটি নৌকা তৈরীতে কখনও এক সপ্তাহ আবার ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। ভালোমানের কাঠের তৈরীকৃত নৌকা ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত টেকশই হয়।
পাইকার(নৌকা বিক্রি) নুরু ব্যাপারী বলেন, প্রায় ২’শ শ্রমিক নৌকার তৈরী সাথে যুক্ত। তাদের জীবিকা চলে নৌকা তৈরী করে। প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়।দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এখানকার নৌকার হাট। প্রতিদিন অর্ডার পাচ্ছি। একেকটি নৌকা বিক্রি করে ১০-২০ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে শ্রমিক-কারিগর ও আমাদেরকে যদি সরকারি বা বেসরকারি ভাবে অল্প লাভে ঋন বা অন্যান্য সুযোগসুবিধা দেয়া হয়, তাহলে এ শিল্পের প্রসার ঘটবে।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে এ হাটে নৌকা কিনতে আসছেন ভাস্কর পোদ্দার।তিনি বলেন, এ বাজারের নৌকার অনেক সুনাম রয়েছে।আগেও একভার এ হাট থেকে নৌকা কিনে নিয়েছি।এখনো নৌকা কিনতে আসছি।১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটা নৌকা কিনেছি।এখান থেকে আমাদের অঞ্চলের অনেকেই নৌকা কিনে নিয়েছে।
এ শিল্পটিকে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রুহুল কুদ্দুছ।তিনি বলেন, এ শিল্পের আরও প্রসার ঘটাতে যা যা করনীয় সেটি আমরা অবশ্যই করবো।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো.আবুল কালাম আজাদ জানান,এ বাজারে নৌকা তৈরীর কাজে যেসকল কারিগর,শ্রমিক আছে। তার সবাই একত্রিত হয়ে সমিতির মাধ্যমে আসলে তাদেরকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এ শিল্পকে প্রসার করতে তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা তৈরীর ব্যবস্থা করা হবে।
সরকারি সহায়তা পেলে পিছিয়ে থাকা বৃহৎ এ নৌকা হাট জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভুমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সচেতনসহল।