Take a fresh look at your lifestyle.

মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ তিন সহযোগীকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা

৫০

গৌরনদী সংবাদদাতা : বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলু ও তার তিন সহযোগিকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমান হারিছ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় হারিছুরের এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। আহতদের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সমর্থক পলাশ হাওলাদার ও হারিছুরের সমর্থক দেলোয়ার হোসেন দিলুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বাটাজোর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর স্ত্রী বিপাশা গুহ অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীকে আগে থেকেই টার্গেট করেছেন হারিছুর রহমান। তিনি মেয়র পদ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে এসেছেন। আমার স্বামী তিন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুন নাহার মেরী, মনির হোসেন মিয়া ও মোঃ হাবিবুর রহমানকে একত্র করে তাদের সাথে নির্বাচনে নামেন।

বিষয়টি হারিছ মেনে না নিয়ে সৈকত গুহ পিকলুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় পিকলু ও তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের কুপিয়ে জখম করেছে। হারিছুর রহমান নিজে পিকলুর বুকের ওপর পা দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, তোর বাপ কে? তোর বাপ হারিছ!

বিপাশা গুহ অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার স্বামীর ওপর তিন দফায় হামলা হয়েছে। হারিছ আসার আগে একবার, হারিছ ঘটনাস্থলে এসে নিজে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে। হারিছুর রহমান মনে করে তার পথের কাটা আমার স্বামী। সেজন্য পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যার জন্য এ হামলা চালিয়েছেন।

খবর পেয়ে পিকলু গুহর ভাই সলিল গুহ পিন্টু ও মা তাপসী রানী গুহ এবং আমি উপজেলার হাসপাতালে ছুটে গেলে পিন্টুকে বেধমভাবে মারধর মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়েছে হারিছ বাহিনীর সদস্যরা। তার মা অর্থাৎ আমার শাশুরি তাপসী রানী গুহ’র ওপর হামলা করে মোবাইল টাকা-পয়সা লুট করে নিয়েছে হারিছ বাহিনী। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।

গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রার্থী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, হারিছ নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ও তার তিনজন সহযোগীকে গুলি করে এবং কুপিয়ে জখম করেছে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে বাধা দিয়েছে। সেখানে পিকলুর স্ত্রী, ভাই ও মা গেলে তাদের ওপরও হারিছের নির্দেশে হামলা চালানো হয়েছে।

 

খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যানসহ আহতদের বরিশাল নিয়ে আসি। হারিছ বাহিনী গৌরনদীতে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হারিছের টর্চার সেলে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। মূলত ত্রাসের মাধ্যমে সে উপজেলা নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমান পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। বিপরীতে হারিছুরের আপন ভাই মোঃ হাবিবুর রহমান, সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী ও মনির হোসেন মিয়া নির্বাচন করার ঘোষনা দেন। আর তাদের তিনজনকে একত্রে নিয়ে মাঠে নামেন ইউপি চেয়ারম্যান পিকলু। বিষয়টি শুরু থেকেই মেনে নেয়নি হারিছুর।

 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেন মিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুকে নিয়ে বাটাজোর এলাকায় গণসংযোগে যান। খবরপেয়ে ঘটনাস্থলে এসে গণসংযোগে বাধা দেন হারিছুর রহমানের সমর্থক দেলোয়ার হোসেন দিলু, ফেরদাউস, রেমন তালুকদার ওরফে হাত কাটা কালু, রাসেল রাঢ়ী সহ ২০/২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল। তারা পিকলু ও তার সঙ্গে থাকা সহযোগীদের কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে।

অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের আপন ভাই মোঃ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান পিকলুর ওপর হারিছ বাহিনী নিয়ে হামলা করে। পিকলুকে খুন করতে কোপায় এবং গুলি করে। গৌরনদী হাসপাতালে নেওয়ার পর হারিছ বাহিনী হাসপাতালে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। আহতদের বরিশালে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর বের হতে পারেনি। পুলিশ এসে অ্যাম্বুলেন্স বের হতে সহায়তা করে। অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, হারিছের ভয়ে আমরা ভাইরাই পৈত্রিক বাড়িতে উঠতে পারিনা। সে বাড়িতে টর্চার সেল চালু করেছে। তার টর্চার সেলে অনেক নেতাকর্মীকে নিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে।
তবে হামলার সূত্রপাতকারী দেলোয়ার হোসেন দিলু অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আমি ও আমার চার বন্ধু চায়ের দোকানে বসেছিলাম। পিকলু ও তার সমর্থকরা আমাদের দেখে গুলি করে। আমি আহত হয়েছি। শেরই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আহতদের শরীরে কোন গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তাদের তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ হারিছুরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি। গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মাজহারুল ইসলাম জানান, এবিষয়ে উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.