মাজারুল ইসলাম,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ দুই দিনের টানা ভারি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তৃতীয় দফায় প্লাবিত হয়েছে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচপ্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৬ মিটার। যা বিপদসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) এক সেন্টিমিটার ওপরে।
নদীপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কিকরন কেন্দ্র জানায়, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ সোমবার রাত থেকে বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার সকাল ৬ টা ও ৯ টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচে। দুপুর ১২টায় আরও বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপদসীমা অতিক্রম করে দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর উভয় পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবেছে চরাঞ্চলের রাস্তা ঘাট, আমনের খেত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বেশ কিছু পরিবার। এসব এলাকার মানুষ তাদের মালপত্র ও গবাদি পশুপাখি অন্যত্র সড়িয়ে নিচ্ছেন।
তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানি প্রবাহ যত বাড়বে বন্যার শ্বঙ্কা ততই বাড়বে। এতে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটে তৃতীয় দফায় বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। পানির চাপের কারনে বেশ কিছু রাস্তা ও বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন ভোটমারীতে ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এ স্থানে তিস্তা নদীর মুলস্রোত ধারা বন্ধ করে সোলার প্যানেল স্থাপন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করতে রাস্তাগুলোতে চাপ পড়েছে। এটি ভেঙে গেলে নদী চলে আসবে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে।
স্থানীয় আবুল হোসেন জানান, সোলার প্যানেলের কারনে পানির চাপ পড়ছে লোকালয়ের রাস্তা বাঁধে। এটি রক্ষা করা না হলে হাজার হাজার বসতভিটা ও ফসলি জমি নষ্ট হবে নদী চলে আসবে উপজেলা শহরে।
তিস্তাপাড়ের গোবর্দ্ধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে নদীর পানি বাড়ছে। ডুবছে চরাঞ্চলের রাস্তা ঘাট। পানিবন্দি হচ্ছে মানুষ। আকাশের পানি আর নদীর পানিতে একাকার হয়ে পড়েছে।
নিজ গড্ডিমারী এলাকার ভ্যান চালক আব্বাস উদ্দিন জানান, নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। ডুবে গেছে এ এলাকার রাস্তা ঘাট। পশুপাখি শিশু বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধিদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন পানিবন্দি পরিবারগুলো।
সিন্দুর্ণা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম জানান, পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেই তার ইউনিয়নের দেড় হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদী। তিস্তা তীরবর্তি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এ অবস্থা আগামী দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে তৃতীয় তিন উন্নতি ঘটতে পারে। তাই এসব অঞ্চলের জনগনকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ঝুকিপূর্ণ বাঁধ ও রাস্তাগুলো সর্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।