নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুই পক্ষের বৈধ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে জমির মাপ দেয়া হোক। অনিয়ম দুর্নীতি এড়াতে সরেজমিনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পাশাপাশি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে দলিল মূলে ক্রয়কৃত ভোগ দখল জমির সমাধান চেয়েছেন নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড আলেকান্দা খালেদাবাদ কলোনীর বাসিন্দা সাইদা জাহান লাভলী।
এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৯ আগষ্ট) বেলা বারো টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলেন, বরিশাল সদর উপজেলার আলেকান্দা মৌজার বগুড়া ৫০ নং জেএল এর ১১৬০ নং এসএ খতিয়ানের ৫৭০৯ নং দাগের ৩.৩৫ শতাংশ জমি গত ০৩/১২/২০১৭ তারিখে বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ১৩৭৬৭ নং সাফ কবলা দলিল মূলে ক্রয় করে জমি ভোগ দখলে রয়েছি। ঢাকা কামরাঙ্গীর চর এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন খান ও তার স্ত্রী মোসা. রিজিয়া বেগম ওরফে রেজিয়া খরিদসূত্রে ও ওয়ারিশসূত্রে এবং সাফিয়া বেগম ওয়ারিশসূত্রে এই জমি বিক্রি করেন আমার স্বামী ও আমার কাছে।
আমার খরিদকৃত জমির মধ্যে ২২ ফুট ৭ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ১৮ ফুট ৬ ইঞ্চি প্রস্থের মধ্যে টিনশেডের একটি বসতঘর আছে। জমির মধ্যে থাকা বসতঘরটি সহ আমি ক্রয় করে বসবাস করছি। ঘরটির আনুমানিক বয়স প্রায় ৩৩ বছর। মাঠ জরিপের সময় আমার প্রতিপক্ষ বসতঘরটি আত্মসাৎ করার জন্য কূট-কৌশলে হাল ১৩৫৩৫ নং দাগটি রাস্তার পার্শ্বে পূর্ব পশ্চিম ভোগ দখল মোতাবেক না এঁকে উত্তর দক্ষিণমুখী করে এঁকেছেন এবং তাদের জমির দাগটি কাল্পনিকভাবে ওই বসতঘরের মধ্যে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর এঁকে নিয়েছেন। ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত পুরাতন ওই বসতঘরটির হোল্ডিং নাম্বার ছিল-১২০৭। পূর্বের দাতাও এই পুরাতন ঘরটিতে ২৬/২৭ বছর বসবাস করেছিলেন। আমরা জমির পার্শ্ববর্তী জমির মালিক হলেন- রওশন আরা খাতুন। তার সাথে ব্যক্তিগত বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি জমি মাপের জন্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বরাবর একটি আবেদন দাখিল করেন।
এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সার্ভেয়ার প্রকৃত সত্য গোপন করে আবেদনকারী কে ওই পুরাতন বসতঘরের জমিতে অনুপ্রবেশ করানোর জন্য অপচেষ্টা চালিয়েছে। আমি সার্ভেয়ার কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবেদনে আপত্তি ও পুনরায় ভূমি পরিমাপের জন্য বিগত ২০/১০/২০২৪ তারিখে একটি আবেদন করি। আবেদন পত্রের সাথে LUC ফরম বাবদ ৫০০/- টাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭২৯ নং চালানের মাধ্যমে দাখিল করেছি। আমাদের ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন পত্রটি এখনও অনুমোদিত না হওয়ায়, আমরা উক্ত বসতঘরটি এখনও অপসারণ করিনি। আমাদের আবেদনপত্রটি নিষ্পত্তি হলে আমরা স্ব-উদ্যোগেই পুরাতন ঘরটি অপসারণ করে নিবো। এ জমি নিয়ে আমি বাদি হয়ে গত ১২/০৫/২০২৫ তারিখে এই জমি নিয়ে বরিশাল জেলা সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা (নং- ২২৬/২৫) দায়ের করি। যা চলমান রয়েছে। বিবাদি হলেন রওশনআরা বেগম, স্বামী-মো. মাহাবুব মিয়া, খালেদাবাদ কলোলী, ১৪ নং ওয়ার্ড, বিসিসি, বরিশাল।
কিন্ত দুঃখের বিষয় প্রায় এক সপ্তাহ যাবত মোতালেব মিয়ার ওয়ারিশ অর্থাৎ ছয় ছেলে- মেয়ে ১. মো. হারুন ২. হাসান ৩. তারেক ৪. মমতাজ বেগম ৫. মর্জিনা বেগম ৬. হিরন মিয়া বিভিন্ন সময় এ ঘটনার অনুকূলে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। টাকা না দিলে আমার জমি দখল করে নেয়ার হুমকি দেয়। এরই ধারাবাহিগতায় গত ১৮-০৮-২০২৫ তারিখ সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে আমার বাড়ির মূল গেট ভেঙ্গে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে বসতঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যার মধ্যে দেড় বড়ি স্বর্ণ, ১টি এলজি টেলিভিশন, ২ টা কম্বল সহ নানা মালামাল নিয়ে যায়। আমি আমার মায়ের কাছে শুনে ৯৯৯ কল দেই। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে। তারপূর্বে উপরোক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
উপস্থিত সাংবাদিকরা সংবাদ সম্মেলনকারী লাভলীকে বিএস জরিপের কাগজ? জমির পরচা ও দাগ অনুযায়ী আছেন? সরকারী ম্যাপের সাথে জমির মিল আছে ? সার্ভেয়ারকে নগদ অর্থ দিয়েছেন তার প্রমাণ আছে? মোতালেব মিয়ার ওয়ারিশরা আপনার কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়েছে তার প্রমাণ আছে? এ সব কিছুর তথ্য প্রমাণ রয়েছে বলে ব্যক্ত করেন সাইদা জাহান লাভলী ও তার ভাই মো. নাসির উদ্দিন খলিফা।
মৃত মোতালেব মিয়ার মেয়ে মমতাজ বেগম বলেন, পুরাতন টিন ও কাঠের চেড়া দিয়ে ছোট একটি বেড়া আমাদের জমির উপর রেখেছে লাভলি। আমি সেই বেড়াটি সরিয়ে তার জায়গায় রেখেছি। ঘন্টা কয়েক পর পুলিশ এসে আমার ভাই-বোনদের নাম বলে জিঞ্জেস করে তারা কোথায়? কারণ জানতে চাইলে ওই বেড়া ভাংচুর সহ চাঁদা চেয়েছেন বলে জানান। তখন আমি জমির কাগজপত্র দেখাতে গেলে পুলিশ একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বলেন- থানায় ডাকা হলে যাবেন। আমার বাপ-দাদার জমি লাভলী জোরপূর্বক নিতে চায় যা সুষ্ঠু তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে।
রওশনআরা বেগমের স্বামী মো. মাহাবুব মিয়া বলেন- সরকারী জমির ম্যাপ অমান্য করে লাভলী তার জমি জোরপূর্বক দখল নিয়েছে। ১৩৫৩৬ দাগে লাভলীর কোন জমি নেই। তারপরও অফিস আদালতে এই দাগ সহ আমার বিএস ডিপি খতিয়ান নম্বর ব্যবহার করে জমি অবৈধভাবে দখল করে হয়রানি করে আসছে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইন শাখায় উপদেষ্টা দুই পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করে লাাভলীর অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। একই সাথে তিনিও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান।