Take a fresh look at your lifestyle.

সংবাদ প্রকাশের জেরে মামলা; জামিন পেলেন সাংবাদিক রিপন

৩৪

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাব্বীর হোসেনের বিরুদ্ধে মসজিদের ‘সরকারি অর্থ-আত্মসাত’ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট ডটকম-এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি রিপন আকন্দ।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে রিপন আকন্দ স্বশরীরে রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক আবদুল মজিদ এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাম্মী আকতার ও অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন তালুকদার।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি চেয়ারম্যান মোসাব্বীর হোসেন ঢাকা পোস্ট ডটকম-এর তৎকালীন সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও প্রতিনিধি রিপন আকন্দের নামে চাঁদাবাজি ও আইসিটি আইনে মামলা করেন। অথচ ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত সংবাদটি তথ্য অধিকার আইনে প্রাপ্ত নথিপত্র ও মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানের আলোকে প্রকাশ করা হয়েছিল।

‘ইউপি চেয়ার‌ম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ’ শিরোনামে ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট ডটকম। প্রকাশিত সংবাদে ২০২১-২২ অর্থবছরের টিআর (ত্রাণ ও কর্মসংস্থান) সাধারণ প্রকল্পের আওতায় মসজিদ সংস্কারের নামে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরের টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘জগতরায় গোপালপুর জাবালে রহমত জামে মসজিদ সংস্কার’ নামের প্রকল্পের বিপরীতে ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও মসজিদ কমিটি টাকা পেয়েছে মাত্র ২৫ হাজার। বাকি ৩২ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন চেয়ারম্যান মোসাব্বীর হোসেন। যা মসজিদের কমিটির সভাপতিরা এ অভিযোগ সরাসরি স্বীকার করেছেন।

জগতরায় গোপালপুর জাবালে রহমত জামে মসজিদের তৎকালীন সভাপতি আবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ‘প্রকল্পে ৫৭ হাজার টাকা হলেও আমরা পেয়েছি ২৫ হাজার টাকা।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমিই এই প্রকল্পের সভাপতি কিন্তু আমাদের মসজিদের নামে প্রকল্প বরাদ্দ করার আগেই চেয়ারম্যান ৫৭ হাজারের মধ্যে ২৫ হাজার টাকা আমাদেরকে দিবেন বলে জানিয়েছিলেন।’

অভিযোগ উঠেছিল, একই অর্থবছরের টিআর’র প্রথম পর্যায়ের ‘রোস্তমের মোড় নূরে রহমত জামে মসজিদ সংস্কার’ প্রকল্পের নামে ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও মসজিদ কমিটি টাকা পেয়েছে মাত্র ১৪ হাজার। বাকি ৪১ হাজার টাকা চেয়ারম্যান মোসাব্বীর, প্রকল্প সভাপতি ও মহিলা সদস্যর স্বামী মাহবুর রহমান এবং ছয় ইউপি সদস্য মিলে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে আত্মসাত করেছেন।

রোস্তমের মোড় নূরে রহমত জামে মসজিদের তৎকালীন সভাপতি মো. নূর ইসলাম বলেছিলেন, ‘কিছুদিন আগে মাহবুর আমাদেরকে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছে কিন্তু আমাদের মসজিদের নামে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিল বা কোন বরাদ্দের টাকা তা আমাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি’।

এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি মাহবুর রহমান প্রথমে অর্থ-আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে গোপন ক্যামেরায় সব অকপটে স্বীকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘পরিষদে একটা সিসটেম আছে। এই প্রকল্পের টাকা ছয়জন মেম্বারকে ৩ হাজার করে, আর চেয়রম্যানকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া লাগছে। কিছু টাকা খরচ গেছে, বাকিটা আমার বউ মহিলা মেম্বার-আমাদের’।

সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান দিদ্দিক। সেসময়ে জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত আনা এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গাইবান্ধা, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, প্রতীকী অনশন ও কলম-ক্যামেরা বন্ধ রেখে কর্মবিরতির মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বীর হোসেন এর আগেও একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবেও কারাগারে ছিলেন। এর আগে, তার বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ উঠেছিল।

Auto House

Leave A Reply

Your email address will not be published.