পানি বিশুদ্ধ করবেন যেভাবে

পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পাত্রের পরিবর্তে কাচ অথবা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা ভালো। সিদ্ধ করা পানি বেশিদিন রেখে দিলে তাতে আবারও জীবাণুর আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ কারণে ফোটানো পানি দুই দিনের বেশি পুরোনো হয়ে গেলে পান করা যাবে না।

পানির ওপর নাম জীবন হলেও যদি সেটা দূষিত হয়, তাহলে পানিই হতে পারে নানা রোগের কারণ। সে জন্য পানি পান করার আগে সেটাকে বিশুদ্ধ করে নেয়া জরুরি। বিবিসির এক প্রতিবেদনে পানি বিশুদ্ধ করার কিছু পদ্ধতির কথা জানানো হয়েছে। চলুন দেখে নেই।

ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করা

 

পানি বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে পুরোনো ও কার্যকর পদ্ধতির একটি হলো সেটা ফুটিয়ে নেয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, পানি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট ধরে ফোটানো হলে এর মধ্যে থাকা জীবাণু, লার্ভাসহ সবই ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর সেই পানি ঠান্ডা করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পরিষ্কার পাত্রে ঢেকে সংরক্ষণ করতে হবে।

পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পাত্রের পরিবর্তে কাচ অথবা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা ভালো। সিদ্ধ করা পানি বেশিদিন রেখে দিলে তাতে আবারও জীবাণুর আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ কারণে ফোটানো পানি দুই দিনের বেশি পুরোনো হয়ে গেলে পান করা যাবে না।

ফিল্টার মেশিনে বিশুদ্ধ করা

পানি ফোটানোর মাধ্যমেই ক্ষতিকর জীবাণু দূর করা সম্ভব হলেও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত থাকতে ফিল্টারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা যেতে পারে। তাছাড়া যাদের গ্যাসের সংকট রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ফিল্টারে পানি বিশুদ্ধ করাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার মধ্যে অনেক জীবাণুর পাশাপাশি পানির দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর করতে সক্ষম। মূলত দুই ধরনের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার একটি সিরামিক ফিল্টার এবং দ্বিতীয়টি সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত রিভার অসমোসিস ফিল্টার।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ সিরামিক ফিল্টার ব্যবহার করে থাকে। এই ফিল্টার থেকে আপনি কতটুকু বিশুদ্ধ পানি পাবেন সেটা নির্ভর করে ফিল্টারটি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় কি না, তার ওপরে।

ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং

পানির জীবাণু ধ্বংস করতে ক্লোরিন বহুল ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক। দুর্গম কোথাও ভ্রমণে গেলে অথবা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে বা জরুরি কোনো অবস্থায় ট্যাবলেটের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা যেতে পারে।

সাধারণত প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট বা ১০ লিটার পানিতে ব্লিচিং গুলিয়ে রেখে দিলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। এভাবে পরিশোধিত পানিতে কিছুটা গন্ধ থাকলেও সেটা পরিষ্কার স্থানে খোলা রাখলে বা পরিচ্ছন্ন কোনো কাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করলে গন্ধটি বাতাসে মিশে যায়।

পটাশ বা ফিটকিরি

এক কলসি পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিলে পানির ভেতরে থাকা ময়লাগুলো তলানিতে স্তর হয়ে জমে। এ ক্ষেত্রে পাত্রের ওপর থেকে শোধিত পানি সংগ্রহ করে তলানির পানি ফেলে দিতে হবে। অথবা পানি ছেকে নিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

সৌর পদ্ধতি

যেসব প্রত্যন্ত স্থানে পরিশোধিত পানির অন্য কোনো উপায় নেই সেখানে প্রাথমিক অবস্থায় সৌর পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে দূষিত পানিকে জীবাণুমুক্ত করতে কয়েক ঘণ্টা তীব্র সূর্যের আলো ও তাপে রেখে দিতে হবে। এতে করে পানির সব ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়।

আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি

পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি জীবাণুমুক্ত করার জন্য অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ কার্যকর একটা পদ্ধতি। এতে করে পানির সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। বাজারের বেশ কয়েকটি আধুনিক ফিল্টারে এই আল্ট্রাভায়োলেট পিউরিফিকেশন প্রযুক্তি রয়েছে। তবে ঘোলা পানিতে বা রাসায়নিকযুক্ত পানিতে এই পদ্ধতিটি খুব একটা কার্যকর নয়। তাছাড়া এই উপায়টি কিছুটা ব্যয়বহুলও।

আয়োডিন মেশানো

এক লিটার পানিতে ২ শতাংশ আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখলেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। তবে এই কাজটি শুধু দক্ষ কারও মাধ্যমে করতে হবে। কারণ পানি ও আয়োডিনের মাত্রা ঠিক না থাকলে সেই পানি শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

Comments (০)
Add Comment