রবিউল ইসলাম রবি: বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী বাজারে ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ এর স্থানে স্থানীয় শহিদুল ইসলাম ওরফে ইতালি শহিদ নামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে মাছ বাজারের পাশাপাশি অবৈধ স্পিডবোট ঘাটও বসিয়েছেন। স্থানটি থেকে বরিশাল-৫ আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নামে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইতালি শহিদ। বরিশাল জেলা পরিষদ সদস্য ও সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আ.লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি শহিদুল ইসলাম হলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর একজন অনুসারী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই বরিশাল মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আধিপত্য হারিয়েছেন। যারফলে সাদিক অনুসারীদের অবৈধ আয়ের উৎসগুলো রদবদল হয়। সবগুলো পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপির অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এরই অংশ হিসেবে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ নির্মাণের নির্ধারিত জমিতে অবৈধ পন্থায় মাছ বাজার ও স্পিডবোট ঘাট স্থাপন করে ইতালি শহিদ।
স্থানীয় বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী মহানগর আ.লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল ওরফে মামা টুটুল এক সময় তালতলী বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এটি উপজেলা পরিষদের তালিকাভুক্ত বাজার নয়। নদীর তীরঘেঁষা জমির ওপর অবৈধ স্থাপন জমিতে মাছের পাইকারি বেচাকেনা হয়। দু’বছর আগে গণপূর্ত বিভাগ জমি দখলমুক্ত করলে মাছ বাজারও উচ্ছেদ হয়। এরপর টুটুল লামছড়ি গ্রামগামী পাকা সড়কের পাশে মাছ বাজার বসিয়েছিলেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের মালিকানাধীন ৯ একরের বেশি জমি বেদখল ছিল। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত সাদিক আবদুল্লাহ আধিপত্য হারালে তালতলী বাজারের ওপরও নিয়ন্ত্রণ হারান তাঁর অনুসারী টুটুল। ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি শহিদের নেতৃত্বে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা এটি দখলে নিয়ে নেয়। নির্বাচনের ক’দিন আগে তারা পাশেই শেখ রাসেল শিশু পার্কের জন্য নির্ধারিত জমির প্রাচীরের মধ্যে বাজার স্থানান্তর করেন। তালতলী থেকে মেহেন্দীগঞ্জগামী অনুমোদহীন স্পিটবোটের ঘাটও স্থানান্তর করা হয় সেখানে।
বাজরের মাছ ব্যবসায়ী কালু সিকদার জানান, আগে টুটুলের পক্ষে তিনিসহ কয়েকজন প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। মাসখানেক আগে শহিদুল ইসলাম বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেন। এখন তারা নিজেরাই টাকা তুলছেন।
স্পিডবোট ব্যবসায়ী মো. আলী হোসেন জানান, পাঁচ বছর ধরে মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট বন্দর পর্যন্ত স্পিডবোট চলছে। কয়েকদিন আগে জেলা পরিষদ সদস্য শহিদুল ইসলাম তাঁকে ফোনে জানিয়েছেন, এ ঘাটের চাঁদার টাকা এখন তাঁকে দিতে হবে।
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে ইউনিয়নের বাইরের লোকেরা মাছ বাজার থেকে টাকা তুলত। এখন ইউনিয়ন আ.লীগ টাকা তুলছে। অবৈধ বাজারটি শেখ রাসেল শিশু পার্কের জমিতে করা ঠিক হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তালতলী মাছ বাজার পরিষদের তালিকাভুক্ত নয়। বাজাটি শিশু পার্কের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। এটিকে তালিকাভুক্ত করে অন্যত্র স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপির মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে বিষয়গুলো জানিয়ে তার হ্যোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দীপক কুমার চ্যাটার্জি জানান, নদীর তীর ঘেঁষে চার একর জমিতে ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ করার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কের পাশে থাকা মাছ বাজারটি মাস খানেক আগে পার্কের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে স্থানান্তর করা হয়। আগে স্পিডবোট-ট্রলার আসা-যাওয়া করত তালতলীর বাজার সংলগ্ন পাকা ঘাটে। এখন পার্কের জমিতে অবৈধভাবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ঘাট স্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।