অনিয়ম, দায়িত্বহীনতায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে:সিইসি

অনলাইন ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নাশকতা ও সহিংসতার কতিপয় সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। তারপরও অনুরোধ করছি আপনারা সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করবেন।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) নির্বাচনের আগের দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সবার সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়ে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে কার্যকরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, নির্বাচন অধিক পরিশুদ্ধ ও অর্থবহ হয়। কিন্তু নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগত প্রশ্নে মত-বিরোধের কারণে এবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সেরকম রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। নির্বাচনী সার্বজনীনতা প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। তারপরও ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সর্বমোট ১৯৭১ জন (১৯৬৯ জন) প্রার্থী ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় মর্মে আখ্যায়িত করা যাবে না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। এখন কেবল ভোট গ্রহণ শুরুর অপেক্ষা। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সব কর্মকর্তাকেও আইন ও বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুধাবন, প্রতিপালন ও প্রয়োগ করে সততা ও নিষ্ঠার সাথে নির্বাচন পরিচালনার সার্বিক বিষয়ে আরোপিত দায়িত্বপালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শৈথিল্য, অসততা ও ব্যত্যয় সহ্য করা হবে না। কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশীশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রার্থিতা তাৎক্ষণিক বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোট গ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা কাম্য নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় নাশকতা ও সহিংসতা একেবারেই হচ্ছে না তা বলা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় ধন-সম্পদের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান ও অবসান প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। আজকে না হলেও ভবিষ্যতের জন্য।

নির্বাচন বর্জনকারী দলসমূহ সহিংস পন্থা পরিহার করে কেবল শান্তিপূর্ণ পন্থায় জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাবে মর্মে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এতে জনমনে আস্থা সঞ্চারিত হয়েছিল। ঘোষিত হরতাল অবরোধের মধ্যে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা দৃশ্যমান হচ্ছে। নাশকতা ও সহিংসতার কতিপয় সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। তারপরও অলঙ্ঘনীয় সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনগণকে অনুরোধ করছি আপনারা সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মূল্যবান নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরও বলেন, দৃশ্যমানতার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ফুটিয়ে তোলা গেলে নির্বাচনের বিশুদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নে জনমনে আস্থা সৃষ্টিতে তা সহায়ক হয়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য। তাই দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা আমরা একান্তভাবে কামনা করছি।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রায় ২৩ হাজার দেশি ও প্রায় ২০০ বিদেশি পর্যবেক্ষক কাজ করবেন। পর্যাপ্ত সংখ্যক দেশি ও বিদেশি সংবাদকর্মীও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং চিত্র ও তথ্য সংগ্রহে মাঠে অবস্থান করবেন।

ধারণ করা ভাষণটি সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার করা হয়।

 

Comments (০)
Add Comment