বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথকে দলীয় সকল পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহন করেছে দল।কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সাক্ষরিত আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। রোববার ওই আদেশে সাক্ষর করেন বিপ্লব বড়ুয়া। যার অনুলিপি দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে। ওই আদেশে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পংকজ নাথের লিখিত জবাব কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দিতে বলা হয়েছে। অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস জানিয়েছেন, কার্যনির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারনে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য পদ এবং আওয়ামী লীগের সকল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে দল। এই সংক্রান্ত নির্দেশনা আমরা পেয়েছি।
তিনি বলেন, গত চার বছরে মেহেন্দিগঞ্জে দলকে বিভক্ত করে নিজের বলয় সৃষ্টি করে পংকজ নাথ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, পঙ্গু করে দেওয়া, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছেন। বিভিন্ন নির্বাচনে সে নৌকার প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করেছেন। দলের বিরুদ্ধে তার অপকর্মের শেষ নেই। সব শেষ ২৮ আগস্ট তার অনুসারীরা মেহেন্দিগঞ্জে হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে ছাত্র ও যুবলীগের ৬ কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে। আর এসব কারণেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, দলের পাঠানো অব্যাহতির চিঠি আমি পেয়েছি। তবে এর বেশি কোন কথা বলতে রাজি হননি এই সংসদ সদস্য। প্রসঙ্গত, সংসদ সদস্য পংকজ নাথের সাথে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের টানপোড়েন চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। পংকজ নাথের বিরোধী পক্ষ ছিলো বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। দুই পক্ষের বিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সহিংসতায় হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
তাছাড়া হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী দেওয়া হলেও পংকজ নাথ নিজের অনুসারীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করতেন। এই নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে উত্তপ্ত সম্পর্ক ছিলো পঙ্কজ নাথের। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জে পংকজ নাথের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় কোনঠাসা ছিলো জেলা আওয়ামী লীগ অনুসারীরা। সম্প্রতি মেহেন্দিগঞ্জ থানার পরিদর্শক ও পংকজ নাথের মধ্যে ফোনের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ওই কল রেকডিং এ পংকজ নাথ মেহেন্দিগঞ্জ পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খানকে কোপানোর হুমকি দেন। এই নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ অনুসারীরা পংকজ নাথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহম্মেদ পংকজ নাথ সহ এ দেশে থাকা হিন্দুদের নিকৃষ্ট বলে অভিহিত করেন। এই নিয়ে পুনরায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মেহেন্দিগঞ্জের রাজনীতি।
পাশপাশি হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার রাজনীতি অনেকটা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছিলো। যে কারণে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সাথে পংকজ দেবনাথের নিরব দ্বন্দ চলছিলো।