উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দিপালী উৎসব আগামীকাল

শ্মশান দীপাবলি
উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দিপালী উৎসব আগামীকাল

পরিতোষ সরকার : প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বরিশাল মহাশ্মশান ঘাটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শ্মশান দীপাবলি উৎসব। মূলত কালীপূজা আগের দিন দীপাবলি উৎসব পালন করে থাকেন সনাতন ধর্ম অবলম্বীরা। বহু বছর আগ থেকেই বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে শ্মশান দিপালী উৎসব ।

 

উপমহাদেশের কোন শ্মশানে এত বড় দীপাবলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয় না বলে জানান দিপালী উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব বিজয় ভক্ত। তাই বলা চলে বরিশাল মহাশ্মশানে অনুষ্ঠিত দিপালী উৎসবটি উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপালী উৎসব। দীপাবলি আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব বিজয় ভক্ত জানান, দীপাবলির উৎসব কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে ।

 

তিনি আরো জানান, প্রতিবছর ন্যায় এ বছরও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দিপালী উৎসবের আয়োজন করেছে বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটি। এই উৎসবে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই নয় জাতি ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলেই আসেন দীপাবলি উৎসবটি দেখার জন্য। তাই এটা কে দীপাবলি উৎসব না বলে মিলন মেলাও বলা চলে। প্রতিবছর ভূত চতুর্দশী পূর্ণ তিথিতে এই উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় । ইতিমধ্যে মহা শ্মশান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করাসহ গেটের সামনে তোরন তৈরি, শ্মশানের ভিতর ও বাহরে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কমিটির অর্থায়নে বিয়ারিশ সমাধির রং করা হয়েছে। এক কথায় সকল কাজই শেষ হয়েছে। আয়োজক কমিটির পাশাপাশি সমাধিস্থ মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনরা সমাধি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও রং করেছেন।

 

তিনি আরো জানান, বরিশাল মহাশ্মশানে কাঁচা পাকা সহ প্রায় ৬০ হাজার সমাধি রয়েছে। এর মধ্যে ৯শত বেওয়ারিশ সমাধি রয়েছে। দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য এ বছর ২০০ এর বেশি স্বেচ্ছাসেব কাজ করবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মহাশ্মশানে ভিতরে বাহিরে ২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আনসার, ডিবি, পুলিশ, র‍্যাব এবং সেনাবাহিনী সহযোগিতা করবে। এবছর দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে মেডিকেল সেবা কার্যক্রম । তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে সেবা দেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক কথায় দিপালী উৎসবটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে বরিশাল মহাশ্মশান কমিটি। বরিশাল মহাশ্মশান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সুশান্ত ঘোষ জানান, উপমহাদেশের মধ্যে একমাত্র বরিশালের শ্মশানেই জাকজমক পূর্ণভাবে দীপাবলির উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। উপমহাদেশের অন্য কোন দেশে এত বড় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করা হয় না। তাই বলা হয় এটা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপালী উৎসব।

 

দিপালী উৎসবে প্রায়ত মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনরা ছাড়াও বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশের দর্শনার্থীরা আসেন উৎসবটি উপভোগ করার জন্য। এই দিনে প্রয়াত মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় সমাধির সামনে মোম, আগরবাতি, ধূপদুনা জ্বালিয়ে অশ্রু সিক্ত নয়নে নাম কীর্তন করেন। মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় স্বজনরা প্রার্থনা করেন। মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ করতে এসে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। তাছাড়া সমাধির সামনে মৃত ব্যক্তির পছন্দের খাবার সাজিয়ে রাখেন।

 

সনাতন ধর্ম অবলম্বীরা মনে করেন, মানুষের দেহের মৃত্যু হলেও আত্মার মৃত্যু নেই। মৃত প্রায়ত ব্যক্তির আত্মা এই দিনে স্বজনদের দেখতে পায় এবং তার পছন্দের খাবার গ্রহণ করেন। প্রতি বছর এই দিনটির জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরাসহ মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনরা অপেক্ষা করে থাকেন । সদস্য সচিব সুশান্ত ঘোষ আরো জানান, বরিশাল মহাশ্মশানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক দানবীরসহ উল্লেখযোগ্য অনেক নামকরা ব্যক্তিদের সমাজে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ, অশ্বিনী কুমার দত্ত, মনোরমা বসু মাসিমা, অমৃত লাল দে, জগন্নাথ পাড়েসহ খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সমাধি রয়েছে । প্রতিবারের ন্যায় এবছর দীপাবলি উৎসব আকর্ষণীয় করার জন্য শ্মশানের দক্ষিণ – পশ্চিম দিকে ছোট করে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

 

এছাড়া এছাড়া শ্মশান দিপালীর পরের দিন বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১মিনিটে শ্মশান কালী মাতার মন্দিরে শ্মশান কালী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা শেষে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। দীপাবলি উৎসবটি সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য আয়োজক কমিটির পাশাপাশি শ্মশান রক্ষা কমিটির সদস্যরা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক সদস্য সহযোগিতা করবে। তিনি আশা করেন, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর সুষ্ঠু এবং সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ হবে মহাদেশের সর্ববৃহৎ দীপাবলি  উৎসব

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দিপালী উৎসব আগামীকাল।
Comments (০)
Add Comment