নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বরিশাল সদর উপজেলার ৮নং চাঁদপুরা ইউনিয়নের রায়পুরা গ্রামে কয়েক একর জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনটি করেছেন রায়পুরা গ্রামের বাসিন্দা মৃত. আব্দুল খান এর ছেলে মো. ইউনুস খান (৬২) এবং পার্শ্ববর্তী খোন্তাখালী গ্রামের মো. হোসেন আলী বেপারী ছেলে মো. মিন্টু বেপারী (৪৫)।
লিখিত বক্তব্যে মো. ইউনুস খান বলেন, রায়পুরা গ্রামে থাকা আমার ২ একর ৬৪ শতাংশ জমি দখল নিতে চায় প্রতিপক্ষ মো. কামরুজ্জামান নবীন। এই নবীন এর গ্রামের বাড়ি হল- মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর চরফেনুয়া গ্রামে।
এই জমি নিয়ে ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি সুরেশ চন্দ্র বাড়ৈ গং বাদী হয়ে মতি লাল দাস গংদের বিবাদী করে বরিশাল যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক ২০০৩ সালের ২৫ মে বাদীর পক্ষে রায় দেয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে মতি লাল দাস এর ছেলে পঙ্কজ কুমার দাস ও তার চাচাতো ভাই শংকর চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ২০১০ সালের ১ আগস্ট বরিশাল যুগ্ম জেলা জজ অতিরিক্ত আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করেন। ২০২১ সালে মোকদ্দমাটি বরিশাল সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বদলি হয়। যার নতুন দেওয়ানী মোকদ্দমা নং- ৫০১/২১। যা বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে এবং আগামী ০৯/০২/২০২৫ইং তারিখে দেওয়ানী মোকদ্দমাটির একতরফা শুনানীর জন্য ধার্য আছে। ২০০৩ সালে বরিশাল যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে দায়েরকৃত এই দেওয়ানী মোকদ্দমার ৩ নং বাদী মো. ইউনুস খান। আদালতের ওই রায়ের অনুকূলে ২ একর ৬৪ শতাংশ জমির ডিগ্রিধারী মালিক হই আমি ইউনুস খান। আমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কামরুজ্জামান নবীন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে আইনজীবীদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু সব কিছুতেই পরাজয় হয় নবীন।
ইউনুস আরো বলেন, ২০০৮ সালে রায়পুরা গ্রামে ওই জমিতে কাঠ-টিনের বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করি। হঠাৎ মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর চরফেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান নবীন এর পক্ষ হয়ে- বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল, বরিশাল সদর যুবলীগ নেতা আফজাল হাওলাদার ও স্থানীয় জমির দালাল খলিল সহ ৫০/৬০ জন গিয়ে আমার বসতঘর ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয় এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সেই থেকে আমি এলাকা ছেড়ে ১৬ বছর পালিয়ে থাকি। গত ৫ আগস্টে আ.লীগ সরকারের পতনের পর আমি এলাকায় ফিরে আসি। আর আমি আমার ভাইয়ের ছেলে মো. মিন্টু বেপারীকে ওই জমির বায়না চুক্তিতে দেই। চলমান বছরের ১০ থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সার্ভেয়ার কর্তৃক জমির কাগজপত্র অনুযায়ী ওই ২ একর ৬৪ শতাংশ জমি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ সহ পিলার ও সাইনবোর্ড লাগানো হয়। প্রতিটি সাইনবোর্ড মিন্টু বেপারীর নামে রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মো. মিন্টু বেপারী বলেন, ১৯৯৮ সালে বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের চরপাতুনিয়া গ্রামের রাজারহাট ব্রিজের পূর্ব পাশে কালভার্ট সংলগ্ন স্থানে আমাকে একা পেয়ে মারধর করে বরিশাল সদর যুবলীগ নেতা আফজাল হাওলাদার বাহিনী। ঘটনাস্থলে আমি মিন্টু জ্ঞান হারিয়ে ফেলি এবং চোখ খুলে দেখতে পাই ‘সাহেবের হাট রাসেল স্মৃতি ক্লাব’ এর মধ্যে শুয়ে আছি। একটু পরই এসআই নূরনবী আসার পর আফজাল আমার হাতে একটি পাইপগান দিয়ে আমার ছবি তোলে এবং পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে আমাকে থানায় বা আদালতে না নিয়ে একটানা তিন মাস বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আফজাল রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি তার পুলিশ দুলাভাইয়ের তদবির সুপারিশে এসআই নূর নবি অতি উৎসাহিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে মামলা দায়ের করেছিল। এখনও সুষ্ঠু তদন্ত করলে ঘটনার মূল রহস্য বেড়িয়ে আসবে। আমি বিএনপি সমর্থক হওয়ায় প্রতিপক্ষ তখন ষড়যন্ত্র পূর্বক এ ঘটনা ঘটিয়েছিল।
মিন্টু আরো বলেন, এই অস্ত্র মামলায় ১০ বছর জেলহাজতে ছিলেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর আরো ৫/৬টি মামলা দায়ের হয়। গত ৫ আগস্টের পর জীবনে একটু স্বস্তি ফিরে আসে। প্রতিপক্ষ আফজাল পালিয়ে থাকলেও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের ছত্রছায়ায় এবং নবীনের সহযোগিতা এখনও আমাকে নানাভাবে হয়রানি করিতেছে।
মুঠোফোনে আফজাল হাওলাদার বলেন, ডিগ্রি যখন হয় তখন থেকে ৩ বা ৬ মাসের মধ্যে ৫৪ ধারা অনুযায়ী নামজারীর পাশাপাশি ডিগ্রির মিউটেশন করতে হয়। এটা ভূমি আইনের নিয়ম। ইউনুস মুহুরি কিছুই করেনি। উলটো জমির এস.এ এবং বিএস পরচা সহ জমির খাজনা আমাদের নামে পরিশোধ করা। দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর প্রতিপক্ষ প্রায় ৫/৬ একর জমি দখলের মিশনে নেমেছে। আর স্থানীয়দের হাতে পাইপগানসহ আটক হয়েছিল মিন্টু বেপারী। তখন আমিও ছিলাম।
মুঠোফোনে কামরুজ্জামান নবীন বলেন, রায়পুরা গ্রামে প্রায় ৩ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। সেই জমি ইউনুস ও মিন্টু দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।