দুর্নীতির মামলায় যে সাজা হতে পারে মির্জা আব্বাসের

অনলাইন ডেস্ক: জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। ২০০৮ সালে বিচার শুরু হওয়ার দীর্ঘ ১৫ বছর পর এ মামলার নিষ্পত্তি হতে চলেছে।

 

বুধবার (২১ নভেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমামের আদালত। যুক্তি উপস্থাপনের সময় মির্জা আব্বাসকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী এ মামলায় সম্পদের মিথ্যা তথ্য বিবরণের দায়ে ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ দশ বছর কারাদণ্ড ও অর্জিত সেই অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে মির্জা আব্বাসের সর্বোচ্চ ১৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি ওয়ান ইলেভেনের (২০০৭) সময় দুদকের দায়ের করা মামলা। মামলার শুরুতে মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজ আব্বাসকে আসামি করা হয়। পরবর্তী সময়ে তারা উচ্চ আদালতে গেলে আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা বাতিল করেন আদালত। এর বিপরীতে আমরা আপিল করলে আপিল বিভাগ আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে এ মামলা বাতিল করে আলাদা মামলা চলতে পারে বলে রায় দেন।

তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন চলে যায়। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।

এই প্রসিকিউটর আরও বলেন, বিচার চলাকালে আমরা ২৪টি সাক্ষী দিয়েছি। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা তার এই অপরাধটা প্রমাণ করতে পেরেছি। এছাড়া মির্জা আব্বাসসহ অনেকে পাঁচ আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমরা তাদের বক্তব্য আদালতে যথার্থ খণ্ডন করেছি। আশা করছি আইনের ধারা অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ ১৩ বছরের সাজা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে।

এর আগে গত ৩১ অক্টোবর মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ওইদিন এ মামলার সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে আদালতে উপস্থিত না হয়ে সময়ের আবেদন করেন মির্জা আব্বাস ও সাফাই সাক্ষীরা। তাদের সময়ের আবেদন না মঞ্জুর করে মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।

পরে ২ নভেম্বর অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় মির্জা আব্বাসকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন করেন রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম আখন্দ। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামি মির্জা আব্বাসের উপস্থিতিতে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ও তার গ্রেপ্তার দেখাতে করা আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিন মির্জা আব্বাসকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে কারাগারে আটক রয়েছেন তিনি।

মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, মামলাটি ২০০৭ সালে এক এগারোর সময় করা। মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়। বিচার চলাকালে ২৪ সাক্ষী ও ৫ জনের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। আমরা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মির্জা আব্বাস নির্দোষ। আশা করি তিনি বেকসুর খালাস পাবেন যদি আদালত উপরের কোনো চাপে না পড়ে ন্যায়বিচার করেন। তবে শেষ কয়েক দিনে দুদকের অন্যান্য মামলার তুলনায় এ মামলার বিচার যে দ্রুত গতিতে চলেছে, সেখানে ন্যায়বিচার পাবো কি না এ বিষয়ে আমরা শঙ্কিত।

জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিবিহীন ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর রমনা থানায় মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক মো. শফিউল আলম।

তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. খায়রুল হুদা। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২২ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।

২০০৮ সালের ১৬ জুন মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিশেষ জজ আদালত-৬ (জেলা ও দায়রা জজ) এর তৎকালীন বিচারক তানজীনা ইসমাইল। বিচার চলাকালে আদালত বিভিন্ন সময়ে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এছাড়া মির্জা আব্বাসসহ পাঁচজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। গত ১৫ নভেম্বর মামলার সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে মির্জা আব্বাস নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন। এদিন তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। একইসঙ্গে ২২ নভেম্বর মামলার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

 

Comments (০)
Add Comment