দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে- বাণিজ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক:  দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে জানিয়ে রোজার শুরুতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

 

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর টিসিবি ভবনে রমজান উপলক্ষে নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারের জন্য টিসিবির পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।

 

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে দেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধির প্রভাব ছাড়াও ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের’ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

 

রমজান আসলে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের মনটা কখন ভাল হবে? কবে আমরা মানুষের সুযোগ দেব? রজমান মাস তো সারা পৃথিবীর জন্য, যারা ধর্মে বিশ্বাস করি, রমজান হল সংযমের মাস।

 

“রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই আমাদের মানসিকতা থাকে যে একবারে বেশি করে কিনব। যার দিনে দরকার এক কেজি, সে হঠাৎ করে ১০ কেজি কিনে নিয়ে যাবে, হঠাৎ করে। যার কারণে হঠাৎ করে সাপ্লাই চেইনে প্রভাব পড়ে যায়।”

 

এটি মানুষকে জানানো দরকার জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “জিনিসপত্র যথেষ্ট পরিমাণে আছে, আপনারা হুড়োহুড়ি করে কিনবেন না। এটা সবার সম্মিলিত কাজ।”

 

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়া ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তেলের দাম কেন বাড়ল, এটা আপনাকে দেখতে হবে। কেউ যদি বেশি নেয় তাহলে আমরা দেখব। তবে গ্লোবাল মার্কেটে যদি বেড়ে যায় তাহলে তেলের দাম কমাতে পারব না।

 

“তারপর যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ফুয়েলের দাম বেড়েছে, টান্সপোর্ট ব্যয় বেড়েছে। সব কিছুর ওপরেই প্রভাব পড়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এজন্য সার্বিকভাবে আমরা চেষ্টা করব।”

 

পেঁয়াজ, তেল, চিনি, মশুর ডাল, কিছু মসলা সহ ১৭টি ধরনের পণ্যেরে দেখভালের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, “গতবার আলুর দাম বেড়েছিল, আলুর দাম আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না; এটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তারপরও চেষ্টা করেছি এনিয়ে কাজ করতে। জিনিসের দামের ওপর এই যে প্রভাব পড়ছে- আমাদেরকে সাপ্লাই ও ডিমান্ড দেখতে হবে।

“সব দাম আমরা ঠিক করি না, বিভিন্ন বিভাগ যে দাম ঠিক করে দেয়, এটাকে দেখে আমরা চেষ্টা করি নিয়ন্ত্রণের।“

ব্রাজিলে দাম বাড়লে মন্ত্রী কেন পদত্যাগ করবেন?

মন্ত্রীকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাজারে সোনালী মুরগির দাম এক সপ্তাহ আগে ২২০ টাকা ছিল, এখন ৩০০ টাকার বেশি। আওয়ামী লীগ ও বাইরের অনেকেই আপনাকে ‘ব্যবসায়ীবান্ধব’ বাণিজ্যমন্ত্রী আখ্যা দিয়ে আপনার পদত্যাগ চান, আপনি ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করবেন কি না?

 

এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “কথা হল যে সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে। বললো না পদত্যাগ করব কি না? দেখি আর কোন কোন মুরগির দাম বাড়লে ডিসিশন নেওয়া যাবে। কথা হল- প্রতিদিন কিছু দাম বাড়ছে, কিছু কমছে, আপনারা তো সাংবাদিক মানুষ, যথেষ্ট নলেজেবল, গ্লোবাল মার্কেটে অবস্থাটা কী দাঁড়িয়েছে, এই মুহূর্তে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেন- এই সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম দেখেন না কেন?

 

“এখন ব্রাজিলে দাম বাড়ার কারণে যদি আমাকে পদত্যাগ করতে হয়- তাহলে কোনো সমস্যা নেই, করতে পারি! ব্যাপারটা কী দাঁড়াল, সাপ্লাই চেইন, মানুষের ডিমান্ড, হঠাৎ করে যদি বেশি নেওয়া শুরু করেন দাম বাড়বেই।”

 

তিনি বলেন, “যখন যেটির দাম বাড়ে তখন তা নিয়ে কথা হয়। যখন পেঁয়াজের দাম বেড়েছে তখন আমি প্লেইনে করে এনে আমি খাওয়াইছি। আবার যখন পেঁয়াজ দাম কম হল তখন বলল- পেঁয়াজ চাষীরা রাস্তায় পেঁয়াজ ফেলে দেবে। দুই দিকেই তো সমস্যা।”

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী রমজানের আগে ও রমজানের মধ্যে দুই দফা এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে কার্ডের ভিত্তিতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে।

আগামী রোববার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রোজার আগে প্রথম পর্বে সয়াবিন তেল, চিনি, মশুর ডাল বিক্রি করা হবে। এরপর রোজা শুরু হলে ৩ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ওই তিন পণ্যের পাশাপাশি ছোলাও বিক্রি করা হবে বলে জানান টিসিবির চেয়ারম্যান।

এছাড়া ঢাকায় এসব পণ্যের সাথে খেজুরও বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

 

Comments (০)
Add Comment