ধর্ষণের ঘটনার বিচারের দাবিতে জাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন অব্যাহত

অনলাইন ডেস্ক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী গণ পোস্টারিং কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

 

এদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা হয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে যায়। হলটির সামনে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। পরে নতুন কলা ভবনের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।


গণ পোস্টারিং চলাকালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার আগেও বহু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই আছে। আমরা ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ এর আগের নিপীড়নের অমিমাংসিত ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত চাই।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মৃধা বলেন, যারা ধর্ষকদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা তাদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। এ ধরনের ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে যে, যেসব শাস্তি ধর্ষকদের দেওয়া হয়েছে তার যেন যথাযথ বাস্তবায়ন হয়। তা নাহলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সজিবুর রহমান সজীব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বহিরাগতের প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটি যেন বাস্তবে প্রতিফলন দেখা যায়। এছাড়া হল থেকে দ্রুততম সময়ে অছাত্রদের বের করতে হবে।

এদিকে দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে আন্দোলনের রূপরেখা বাস্তবায়নে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ নামে প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করা হয়। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হবে।

নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের সংগঠকরা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি অন্যায়-অপকর্ম ও নিপীড়নের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনি থেকে শুরু করে মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে বহিরাগত নারী ধর্ষণের মূল কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি এখনই বন্ধ না করলে নিপীড়করা সাহস পেয়ে যাবে। এদের এখনই মূলোৎপাটন করতেই মঞ্চ গঠন করা হয়েছে।

মঞ্চের সংগঠক ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, সকল নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়তে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ গঠন করা হয়েছে। যারা এই আন্দোলনকে পরিচালনা করবে তাদের নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মঞ্চের কমিটি ঘোষণা করা হবে। এই মঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সকল অন্যায়-অপকর্ম, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করবে।

এছাড়া নিপীড়নের অভিযোগের অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচারে গঠিত স্ট্রাকচার্ড কমিটির সমালোচনা করে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক বিভিন্ন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটি গঠন করা হয়। সবার শেষে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি পূর্বে গঠিত কমিটিরগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠনের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তার বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। উপাচার্য কমিটির প্রধান হয়েও বিচার করছেন না। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, এ ধরনের ঘটনার পুরোপরি দায় উপাচার্যকে নিতে হবে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হলে গতকাল রোববার বিকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে প্রশাসন। সেখানে ধর্ষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান ধর্ষণে অভিযুক্ত ও তাদের পালাতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আর ভুক্তভোগী নারী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রয়েছেন।

 

Comments (০)
Add Comment