নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে গজারিয়া দুই ইউনিয়নবাসীর পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

স্টাফ রিপোর্টার: বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত একটি পুরুত্বপূর্ণ জনপদ খাজুরিয়া ইউনিয়নে ১৫ নং জয়নগর এবং ১২ নং দড়িচর কে রক্ষার স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে এলাকাবাসী।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ১২নং দড়িচর খাজুরিয়া বিএনপি সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন নান্নু শিকদার, ১৫ নং জয়নগর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মোঃ জসিমউদদীন, সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ শিক্ষক মোঃ নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

১৫ নং জয়নগর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মোঃ জসিমউদদীন জানান, ১৫ নং জয়নগর ইউনিয়ন এবং ১২ নং দড়িচর বরিশাল জেলার মেঘনা নদীর নিম্নপ্রবাহের একটি ধারা হিজলা উপজেলার দক্ষিন পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাউশিয়া, জয়নগর ও দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে দক্ষিন-পশ্চিমে কালাবদর, কীর্তনখোলা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে “গজারিয়া” নামে পরিচিত এ নদী বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ইতোমধ্যে এ নদীর ভাঙ্গনে পশ্চিম পাড়ের দুটি ইউনিয়নের মোট আয়তনের প্রায় ৮০% নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফসলি জমি, ভিটেমাটি হারিয়ে এ জনপদের হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। সরকারি প্রাইমারি, হাইস্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের অসহায় লোকজন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানবীয় মৌলিক চাহিদা থেকে বিচ্ছিন্ন ও বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। শত শত শিশু শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে শিশু শ্রমিকে রুপান্তরিত হচ্ছে। প্রায় ১০,০০০ বর্গকিমি আয়তনের এ জনপদে ৩০ হাজারেরও অধিক লোকের বসবাস, যাদের অধিকাংশই কৃষি ও মৎসজীবী। বাকি যে বসবাস যোগ্য উঁচু স্থান রয়েছে তাও আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বিলীন হয়ে যাওয়ার প্রবল শঙ্কায় রয়েছে। আমাদের এ জনপদ কে বাচাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।

 

১২নং দড়িচর খাজুরিয়া বিএনপি সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন নান্নু শিকদার জানান, বর্তমানে আমাদের নাদের আলী স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দড়িচর খাজুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রাইমারি, অসংখ্য বসতবাড়ি, ফসলি জমি আসন্ন নদী ভাঙ্গনের হুমকির সম্মুখীন। প্রবাহিত গজারিয়া নদীটি রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিনবঙ্গের সাথে যোগাযোগের প্রধান নৌ রুট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া এ নদীতে জেলেদের ধরা ইলিশ মাছ দেশের মোট যোগানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সরবরাহ করে থাকে। দেশের অর্থনীতিতে এ নদী ও জনপদের অবদান অনস্বীকার্য। কিছু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, এ নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে বিশেষ করে পশ্চিম পাড়ের জনপদকে রক্ষায় এ যাবত কোন কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা গৃহীত হয় নি। জনগনের দাবির প্রেক্ষিতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন ক্ষণে ক্ষণে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখে নি, যা এ অঞ্চলের মানুষের সাথে স্পষ্ট প্রতারণা ও প্রহসনের শামিল। আমরা এর প্রতিকার চাই ও দ্রুত এ দুই ইউনিয়নের মানুষ কে বাচাতে ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনের।

এসময় স্মারকলিপিতে তিনটি দাবি জানান উক্ত ইউনিয়নের এলাকাবাসী।

দাবিতে উল্লেখ করেন, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষ জনগণকে জানাবে ও বাস্তবায়ন করতে হবে। নদীভাঙ্গনে উদ্বাস্তু হওয়া ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দান দিতে হবে। রবিবার ১৩ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে গজারিয়া নদীতে অবরোধ করে সকল ধরণের নৌ চলাচল বন্ধ করা হবে।

নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে গজারিয়া দুই ইউনিয়নবাসীর পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান
Comments (০)
Add Comment