পটুয়াখালীতে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় চেয়ারম্যান ও নারীসহ ৮ আ.লীগ নেতাকর্মী আহত

বরিশাল প্রতিনিধি : নির্বাচনী সহিংসতার জের ধরে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হবার পরই একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের উপর একের পর এক রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা চলমান রেখেছে। নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত মহিপুর উপজেলার ৭নং লতাচাপলী ইউনিয়নের ৮ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে। সর্বশেষ হামলার শিকার হয়েছে লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আনসার উদ্দিন মোল্লা (৫৫) ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৫)। আহত দু’জনই বর্তমানে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ হামলার ঘটনার পর থেকেই পটুয়াখালী-৪ আসনের অনান্য ইউনিয়নে নেতা কর্মীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাকি আহতদের মধ্যে কেউ স্থানীয় চিকিৎসার কেউ উন্নত চিকিৎসা সেবা নিয়েছে।

স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান মহিব নির্বাচিত হয়। একই দলের প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল মার্কা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন তিনবারের এমপি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। আ.লীগের কেন্দ্রীয় ঘোষণা ছিল, দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলেও দলের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। সেই নিয়ম মেনে এলাকার স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেন লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, এমপি থাকা অবস্থায় ইউনিয়ন পর্যায়ে যোগাযোগ তেমন ভালো না রাখায় দলের নিয়ম মেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়। তার ইউনিয়ন থেকে নৌকার পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয় তরুণ দল ও ছাত্র দলের নেতা নজরুল ফকির (৪২) ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। বর্তমানে ছাত্রলীগের তকমা লাগিয়ে নজরুল ফকিরের নেতৃত্বে শাহিন, সুমন, রিয়াজ, রুবেল, রাজু ও ইসমাইলসহ ২০/২২ জন মিলে এলাকায় সন্ত্রাসীর রাজত্ব কায়েম করছে। বুধবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর গ্রামের বাড়ি থেকে শহরের বাড়িতে মোটরসাইকেলযোগে যাবার পথে আলিপুর বাজার সংলগ্ন অগ্রণী ব্যাংকের সামনে পৌঁছামাত্রই ওৎ পেতে থাকা ওই সকল ব্যক্তিরা হাতুড়ী দিয়ে হামলা চালায়। হাতুড়ী ও রডের আঘাতে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা আনসার উদ্দিন মোল্লার বাম-ডান পায়ের ৩-২ স্থান ভেঙ্গে যায়। এবং ডান কাঁধ, বাহু ও পিঠে মারাক্তক জখম হয়। অপরদিকে হাতুড়ীর আঘাতে খাদিজা বেগমের বাম পা ভেঙ্গে যায়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলাসহ নানা অপরাধে অভিযুক্ত বলে জানান তিনি।

মোটরসাইকেল চালক মো: সোহেল রানা বলেন, এটা পরিকল্পিত হামলা। কারণ হঠাৎ হামলা করা হয়েছে। প্রথমে তার শরীরে তারপর পায়ে আঘাত করেছে। জ্যাকেট পরে থাকায় শরীরে বেশি আঘাত না পেলেও পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। এ সময় মোটরসাইকেল থেকে তিনি পড়ে যায়। তখন হামলাকারীরা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে বেদম মারধর করেছে। হামলাকারীরা মোটরসাইকেলটিও ভাংচুর করেছে বলে জানান তিনি।

অনুসন্ধানকালে বেড়িয়ে এসেছে, নির্বাচনের ২ দিন পর দুপুরে আলিপুর চৌ রাস্থায় হামালার শিকার হয়েছিল আহত আনসার উদ্দিন মোল্লার ছোট ভাই মো: মোশারেফ মোল্লা (৪০)। এর দু’দিন পর ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে হামলার শিকার হয় ইউপি শ্রমিক লীগের সদস্য মো: মালেক হাওলাদার (৫৫), আলীপুর বাজারে বসেই হামলার শিকার হয় জাহিদ হাওলাদার (২০),। পর্যায়ক্রমে বটতলা নামক স্থানে হামলার শিকার হয় মো: আসাদ মোল্লা (২৩), অপু গাজী (২৬) ও তার মা, ইসমাইল মাঝি (২৫)। এছাড়া মাস কয়েক আগে আলীপুর বাজারে বসে হালিম হাওলাদারের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। অপর এক সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী-৪ আসনের কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে ১৬ ইউপি চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগলের সমর্থক ছিলেন। এ সব ইউনিয়নে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পটুয়াখালী-৪ আসনজুড়ে নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমের অনুসন্ধান চলছে।

পটুয়াখালীতে নির্বাচনী সহিংসতায় রক্তক্ষয়ী হামলায় চেয়ারম্যান ও নারীসহ ৮ আহত আ.লীগ নেতাকর্মী
Comments (০)
Add Comment