নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালে সংবাদের তথ্য সংগ্রহ কালে আদালতের প্রধান ফটকের সামনে ২ সাংবাদিককে মারধর করে আহত করে, মটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ছাত্রদল নেতারা।
২৭ মার্চ,বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল জজকোর্টে সংবাদ সংগ্রহকালে আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক ভোরের আলো পত্রিকার ফটো সাংবাদিক এন আমিন রাসেল ও দৈনিক বরিশাল মুখপত্র পত্রিকার রিপোর্টার মনিরুল ইসলামের উপর এ হামলায় চালায় ছাত্রদলের নেতারা।
বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ি এর নেতৃত্বে হামলা অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর বিচারের দাবিতে সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
এসময় ফটোসাংবাদিক এন আমিন রাসেলের ক্যামেরা ও রিপোর্টার মনিরুল ইসলামের মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং মটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়।
আহতরা সাংবাদিকরা জানান, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ির নেতৃত্বে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আহতরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
- হামলাকারীরা হলেন- বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ি, বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আলমাস সরদার, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নগরীর ১০ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. মাসুম হাওলাদার মাসুম,জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন ও রাজিব আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসাইন, সদস্য জুয়েল সহ তাদের সাথে থাকা নাইম, শাওন,জাহিদ ও মাহিন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আদালতের প্রধান ফটকে পুলিশের একটি গাড়িকে পথরোধ করে ছাত্রদল নেতারা। সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উপর চড়াও হয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ি সহ অন্যান্যরা। তারা আব্বাস নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ রক্ষা করেছে এমন দাবি তুলে এবং পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে পরে। এ সময় সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদেরকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে হামলা চালিয়ে তাদের ব্যবহৃত মটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হলে ছাত্রদল নেতারা সেখান থেকে সটকে পরে। এসময় সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশের ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা সড়ক থেকে উঠে যায়।
অভিযুক্ত সোহেল রাঢ়ি অভিযোগ অস্বীকার করে আব্বাস হাওলাদারকে ফ্যাসিস্ট উল্লেখ করে সাংবাদিকরা ফ্যাসিস্টদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন।
- অপরদিকে আব্বাস হাওলাদার জানান, তিনি মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা। তার পিতা আঃ রব হাওলাদার মুলাদীর ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি থাকায় গত বছর প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় । ঐ মামলার বাদী হিসেবে আব্বাস আদালতে আসলে তাকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বিষয়টি তিনি পুলিশ প্রশাসন সহ সাংবাদিকদের অবহিত করেন। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে প্রধান ফটকে আসলে সোহেল রাঢ়ীর নেতৃত্বে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালানো হয়।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনিসুর রহমান স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ সহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
বিএনপি’র বরিশাল মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব এ্যাড. মীর জাহিদুল কবির জাহিদ ঘটনাস্থল এসে সাংবাদিকদের উপর হামলার দায় বিএনপি নিবে না বলে জানান এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থার জন্য সিনিয়র নেতাদের অবহিত করেছেন বলে জানান।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, খবর পেয়ে তিনিসহ ঊর্ধ্বতনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে ওসি জানান।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি বরিশালে প্রকাশ্যে একজনকে হত্যা, টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যকে অপহরণ করে নির্যাতনের ঘটনায় নাম আসে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের। এ ঘটনায় মামলা দায়ের সহ কয়েকজন আটকও হয়েছেন।