বরিশালে নির্যাতনে হাজতির মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:   বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের চরফেনুয়ায় দেলোয়ার হোসেন হত্যা মামলার আসামী জহিরুল হাওলাদেরর মৃত্যু অস্বাভাবিক বলে দাবী করেছেন তার স্বজনরা।

তারা বলছেন ২৩ বছরের একটি ছেলে বুকে ব্যথা উঠে হঠাৎ করে মারা যেতে পারে না। তাকে পুলিশ নির্যাতন করা করেছে এবং মৃত্যুর ৪/৫ দিন আগে জেলে বসেই কে বা কারা জহিরুলকে জোড় করে একটি ইনজেকশন দিয়েছিলো, সেই থেকেই অসুস্থ ছিলো জহিরুল। তবে পুলিশ বলছে বিষয়টি পুরোপুরি ভিত্তিহীণ। হাসপাতাল ও কারা কর্তৃপক্ষ ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ ঠিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন।

 

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে বুকে ব্যথা ওঠে হাজতি জহিরুলের। এরপর তাকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। জহিরুল মেহেন্দিগঞ্জের চরফেনুয়া এলাকার বারেক হাওলাদারের ছেলে। একই এলাকার বৃদ্ধ দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার হত্যা মামলার ১২ নম্বর আসামী। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে আসে জহিরুল হাওলাদার।

জহিরুলের বড় ভাই মোহাম্মদ আলী আকবর বলেন, ‘আমার ভাই হত্যাকান্ডের সাথে কোনো ভাবেই জড়িত না। ও ঢাকায় থাকে, বাড়ি বেড়াতে আসছিলো। জহিরুলকে ১২ নম্বর আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। পিবিআই এর লোকজন আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করে আদালতে না দিয়ে তারা ওকে নির্যাতন করে, ব্যাপক মারধরও করে। সেই থেকেই জহিরুল অসুস্থ ছিলো। ৪/৫ দিন আগে কারাগারের মধ্যে কিছু লোকজন জহিরুলকে জোড় করে চেপে ধরে ঘাড়ে ইনজেকশন দিয়েছিলো। এই খবরটা জহিরুল আমাদের জেল থেকে ফোন করে জানিয়েছিলো।

রোববার সকালে ফোন দিয়ে জহিরুল মারা গেছে বলে কারাগার থেকে জানানো হয়। জহিরুলের যে বয়স তাতে যেভাবে মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে সেটা বিশ^াস করা যাচ্ছে না। তাকে অমানবিক নির্যাতন করে মারা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই। মৃত জহিরুলের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, ‘জহিরুল কোনো সময় কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো না। মার্ডার করছে এক গ্রæপ আর আসামী করছে নিরপরাধ লোকজনরে। ঢাকায় স্ক্রীন প্রিন্টের দোকান আছে জহিরুলের। বাদী পক্ষ পুলিশরে টাহা পয়সা খাওয়াইয়া জহিরুলকে নির্যাতন করাইছে। জহিরুলকে হত্যা করা হইছে পরিকল্পিতভাবে। আমরা এর সুষ্ঠ তদন্ত করে জড়িতদের বিচার চাই।’

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের এ্যাম্বুলেন্স চালক মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, ‘সকালে যখন হাজতিকে গাড়িতে ওঠানো হচ্ছিলো তখন তার মুখ থেকে ফ্যানা বের হচ্ছিলো। কারাগারে বসেই মারা গেছে এই হাজতি।’ বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের রক্ষী উত্তম বলেন, ‘আমরা তো আর ডাক্তার না, যতটুকু শুনেছি সেটা হচ্ছে বুকে ব্যথা উঠে মারা গেছেন এই ব্যক্তি। আমরা লাশ ঘরে এসেছি ময়না তদন্ত শেষ হলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করার জন্য।

’ কারাগারের ডেপুটি জেলার আল মামুন খান বলেন, ‘জহিরুল হাওলাদার নামের এই হাজতি বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলো। হঠাৎ করেই তার মৃত্যু হয়েছে।’ বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বলেন, ‘কারাগারে মৃত হাজতি কোনো হামলার শিকার হয়নি বা নির্যাতিত হয়নি। এমনটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগে তাকে নির্যাতন কেউ করেছে কিনা সে বিষয়টিও আমাদের নজরে আসেনি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থেকে সব বিষয়ে দেখেছেন। হাজতির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

’ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বরিশাল অ লের পুলিশ সুপার হুমায়ন কবির বলেন, ‘তিন মাসে আগে এই আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন মেডিকেল ফিটনেস দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এখন নির্যাতনের পর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি তো নেই বরং এটা পুরোপুরি অসত্য। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই হাজতির হাসপাতালে আসার আগেই মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৬ মে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে কৃষক দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়। এই ঘটনায় তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম হাওলাদার বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০ জনের বিরুদ্ধে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় ১২ নম্বর আসামী ছিলো জহিরুল। দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার মৃত জহিরুলের প্রতিবেশী ছিলো।##

Comments (০)
Add Comment