নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা থেকে বরিশালে পর্যটক বেশে যাত্রী নিয়ে পৌঁছেছে শতবর্ষী স্টিমার নদীপথ ও দক্ষিণাঞ্চলের জীবনযাত্রায় জীবন্ত ইতিহাস ‘পিএস মাহসুদ’। দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর ৯৬০ যাত্রী বহনক্ষমতা থাকলেও শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে নৌযানটিতে বরিশাল এসেছেন প্রায় অর্ধশত যাত্রী।
তবে বরিশাল নদীবন্দরে ঘাট সংকট থাকায় স্টিমারটি নোঙর করে নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন টার্মিনালে। এতে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন বরিশালের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রেমিসহ জনসাধারণ।
শতবর্ষী এই স্টিমার শুধু নৌযানে অতীতে যাত্রী পরিবহণ করলেও এবার প্রথম সরকার কাজে লাগিয়েছে প্রমোদতরী হিসাবে।
শতবর্ষী এই স্টিমার শুধু নৌযানে অতীতে যাত্রী পরিবহণ করলেও এবার প্রথম সরকার কাজে লাগিয়েছে প্রমোদতরী হিসাবে।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর ও ২১ নভেম্বর নৌযানটি ঢাকা থেকে যাত্রা করার কথা থাকলেও পর্যকট সংকটে তা আর হয়নি।
বিআইডব্লিউটিসির সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পিএস মাহসুদ প্রতি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা থেকে এবং প্রতি শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বরিশাল থেকে যাত্রা করবে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, পিএস মাহসুদ শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ‘পর্যটক সার্ভিস’ হিসেবে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। দুপুর ১টার দিকে স্টিমারটি চাঁদপুর ঘাটে নোঙর করে দশ মিনিট অপেক্ষার পর ফের বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা রওনা দেয়। চাঁদপুর নৌবন্দরে জাহাজটি নোঙর করলেও সেখান থেকে কোন যাত্রী আরোহণ করেনি। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে স্টিমার পিএস মাহসুদ বরিশাল নদী বন্দর সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে আসে। এসময় ঘাট সংকট থাকার কারণে পার্শ্ববর্তী ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন পন্টুনে নোঙর করে জাহাজটি।
বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, নতুনভাবে ঢাকা-বরিশাল রুটে প্রথম শ্রেণিতে জনপ্রতি ভাড়া ২৬শ ৬০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৬শ ৫০ টাকা এবং ডেক শ্রেণিতে ৬শ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
যাত্রী ইমন খন্দকার বলেন, শতবছরের ইতিহাস নিয়ে নদীতে ভেসে বেড়ানো এই স্টিমারের যাত্রা খুবই রোমাঞ্চকর লেগেছে। পুরো যাত্রাপথে মনে হয়েছে ঐতিহ্যের এক বাক্সে ভেসে বেড়াচ্ছি। কার্যকরী প্রচারণা করতে পারলে সরকারি এই নৌযানে যাত্রী বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
যাত্রী ইমন খন্দকার বলেন, শতবছরের ইতিহাস নিয়ে নদীতে ভেসে বেড়ানো এই স্টিমারের যাত্রা খুবই রোমাঞ্চকর লেগেছে। পুরো যাত্রাপথে মনে হয়েছে ঐতিহ্যের এক বাক্সে ভেসে বেড়াচ্ছি। কার্যকরী প্রচারণা করতে পারলে সরকারি এই নৌযানে যাত্রী বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
বরিশালের সংস্কৃতিজন শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, স্টিমার দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের স্মৃতি বয়ে নিয়ে আবার বরিশালে নোঙর করার বিষয়টি খুবই আনন্দের। এই স্মৃতির বাহনটি যাতে নিয়মিত এই রুটে চলাচল করতে পারে সেজন্য আমাদের সকলের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রসঙ্গতঃ পি এস মাহসুদ ১৯২২ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে নির্মিত হয়। বেলজিয়ামের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ১৯৮৩ সালে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেডের মাধ্যমে স্টিমারটির স্টিম ইঞ্জিনকে ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালে মেকানিক্যাল গিয়ার সিস্টেমে রূপান্তর করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধ হওয়ার আগে নৌযানটি টানা প্রায় ২৫ বছর অন্যান্য স্টীমারের সঙ্গে ঢাকা-বরিশাল-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল-মোড়েলগঞ্জ নৌপথে যাত্রী পরিবহন করে।