বরিশালে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তোমরা আজকে গর্বিত গ্রাজুয়েটস। তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন নিজেদের বাবা-মাসহ দেশ ও জাতি, তাই সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। তোমরা সকল বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে এসেছ। যারা তোমাদের শিক্ষাদান করলেন তাদের কথা মনে রেখ।

১৮অক্টোবর,শনিবার নগরীর বেলসপার্কে শনিবার অনুষ্ঠিত বরিশালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের (ইউজিভি) প্রথম সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বরিশাল বিভাগে প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন করলো। এই আয়োজনে তিন হাজারেরও অধিক প্রাক্তণ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের এই বয়সে শিক্ষকরা একদিন ছিলেন। তাই তারা জানেন এই সময়ে শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে কত চঞ্চলতা-অস্থিরতা কাজ করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তো সেই বয়সটা ছিল না, যে বয়সটা আজকে শিক্ষকরা পার করছেন। এই গ্যাপটা শিক্ষককে দূর করতে হবে।

ড. ফায়েজ শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষার্থীদের সম্মানের চোখে দেখতে হবে। তাদের চাহিদা কি তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে একজন শিক্ষককে। শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সচেতন। তারা আপনাদের পর্যবেক্ষণ করে, তারা বুঝতে পারে আপনি প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে যাচ্ছেন নাকি যাচ্ছেন না।

অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ছোটবেলায় স্কুলের ছাত্রাবস্থায় বরিশাল এসেছিলাম, তারপর আজ আবার আসলাম। এই সময়ের মধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে জিইউবি। এই বিশ্ববিদ্যালয় চরিত্র গঠন করে কিভাবে বেঁচে থাকতে হয় তা শেখায়। যারা এই বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে এগিয়ে এসেছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

সমাবর্তনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির চেয়ারম্যান হলেন প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ।

এছাড়াও সমাবর্তন বক্তা ছিলেন, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, ইউজিভি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল বাকী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ আলম, ইউজিভি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. মো. ইমরান চৌধুরী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. রাবেয়া বেগম, সমাবর্তনের আহ্বায়ক ইউজিভি’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহমেদ।

বরিশালের ঐত্যিবাহী বেলস্ পার্ক মাঠে অনুষ্ঠিত প্রথম সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি সাফল্যের পরম স্বীকৃতি এই সমাবর্তন। এই সমাবর্তন শুধু ইউজিভির প্রথম সমাবর্তন নয়, পুরো বরিশাল বিভাগে প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয় এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। তাই এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আমার জীবনের বড় গর্ব।

ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের উপাচার্য ড প্রফেসর ড. আবদুল বাকি বলেন, ইউজিভির প্রথম সমাবর্তন আমাদের প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে এক মাইলফলক তৈরি করেছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম, সাফল্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। তাদের জ্ঞান ও মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই আমাদের লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি, গবেষণা, প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উদ্ভাবনী, সৃজনশীল এবং ফলাফলভিত্তিক শিক্ষার মডেল হিসেবে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইংরেজী, এবং ডিপ্লোমা ইন সাইবার সিকিউরিটি সহ বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রকল্প, গবেষণা, উদ্ভাবনী কার্যক্রম এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যারা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবিত করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, “ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের লক্ষ্য শুধু শিক্ষার্থী তৈরি করা নয়, বরং তাদেরকে সৃজনশীল, দায়িত্বশীল এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সামাজিক দায়িত্বের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে দকিণবঙ্গ শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।” বিশ্ববিদ্যালয় নবায়নযোগ্য শক্তি, স্মার্ট প্রযুক্তি, তথ্য ও সাইবার নিরাপত্তা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, এবং সমাজসেবামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। শিক্ষার্থীরা শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানই অর্জন করছে না, বরং সমাজের জন্য দায়িত্বশীল এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় সক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রোগ্রাম, প্রজেক্ট এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক দক্ষতা অর্জন করছে। ডিপ্লোমা ইন সাইবার সিকিউরিটি শিক্ষার্থীদের তথ্য ও সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সক্ষম করে তুলছে, যা আজকের ডিজিটাল যুগে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী প্রকল্প ও ল্যাবরেটরি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর এবং বাস্তবমুখী দক্ষতা অর্জনে সহায়ক।

Comments (০)
Add Comment