স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে চিকিৎসকসহ কর্মরতদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল শার্টডাউনের হুশিয়ারী দিয়েছে চিকিৎসকরা।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা পৃথক তিনটি সংবাদ সম্মেলন করে এই হুশিয়ারী দেন। নিরাপদ কর্মস্থল দাবিতে কর্মরতরা
রোববার দুপুর তিনটা থেকে কর্মবিরতি চলমান থাকায় রোগীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছে। এছাড়াও রোগী-চিকিৎসকসহ কর্মরতদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এছাড়া ক্লাস বর্জন করেছে শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার দাবিতে সোমবার দুপুরে দুই ঘণ্টা বরিশাল জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয় ঘেরাও করে সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রজনতা। সড়ক অবরোধ করায় জনদুর্ভোগ হয়েছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতসহ
চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে আন্দোলনের প্রধান সংগঠক মহিউদ্দিন রনিসহ জড়িতদের দাবিতে হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করে।
এরপর শেবাচিম হাসপাতালের মিড লেভেল চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে একই হুশিয়ারী দেয়।
রোববার দুপুর তিনটা থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। তবে জরুরী সেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।
সংবাদ সম্মেলনে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. মো. নাজমুল হুদা বলেন, আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলীপ রায় স্যারের উপর অতর্কিত হামলা করে। এছাড়া হাসপাতালের স্টাফদের উপর হামলা করে। হাসপাতাল ভবনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুরো হাসপাতালে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় উসকানিদাতা এবং হামলাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানাই। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় আমরা রোববার বিকাল ৩টা থেকে কর্মবিরতি যাই। এরপরও রোগীদের কথা চিন্তা করে ফের কর্মস্থলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা জরুরি সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু হামলাকারীরা আমাদের অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থাতে আমরা ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত এবং উস্কানিদাতাদের মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুর ১২ টা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ সকল চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
এর আগে আন্দোলনরত ছাত্রজনতা দুপুর ১২টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে যায়। সেখানে গিয়ে সামনের সড়ক অবরোধ করে দুপুর দুইটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে।
এসময় ছাত্রজনতা দ্রুত সময়ের মধ্যে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর, রোগী হয়রানি ও স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানায়। পাশাপাশি আন্দোলনরত ছাত্রজনতার উপর হামলার ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন।
হাসপাতালের রোগী রহিমা বেগম বলেন, হাসপাতালে এসেও শান্তিতে নেই। হামলা মারধরসহ উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে আতংকে রয়েছে বলে জানান তিনি।
কাউনিয়ার বাসিন্দা আলামিন হাওলাদার বলেন, ডিসি অফিসের সামনের রাস্তা আটকে ঘেরাও করা হয়েছে। এ কারনে ডিসি অফিসে কাজে এসে দুর্ভোগে পরেছি।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। হাসপাতাল এলাকা পুলিশী নজরদারির মধ্যে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে ২২ দিন ধরে চলা আন্দোলনের মধ্যে গত সোমবার (১১ আগস্ট) শেবাচিম হাসপাতালের জরুরী গেটে আমরণ অনশনে বসেন কয়েক শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়ে অনশন থেকে তুলে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এঘটনায় দুই পক্ষের একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে দাবি করা হয়। এরপর শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কোতয়ালী মডেল থানায় বৃহস্পতিবার রাতে ৪২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়।
এরপর রোববার শেবাচিম হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে আন্দোলনে নামে। একই সময় ছাত্রজনতা শেবাচিমের প্রধান গেটে অবস্থানকালে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন ছাত্রজনতার ছোড়া ইটে চিকিৎসকসহ কয়েকজন আহত হয় বলে অভিযোগ।
এরপর রোববার দুপুর থেকে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে হুশিয়ারী দেয়। চলমান এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কয়েকজন নেতা।