নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
হ্যাকার চক্রের কবলে পরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী ও বরিশালের বাসিন্দা সাব্বির খান ডিকেন্স। ইংল্যান্ড থেকে অনলাইনে ব্যবসা চালুর করার কয়েকমাসই পরেই তাকে পরতে হয় হ্যাকারের কবলে। এতে করে তার প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে হ্যাকার চক্র।
সকল আইডি ফেরৎ দেওয়ার কথা বলে আরও ১৮ লক্ষ টাকা নিয়েছেন চক্রটি, তবে ব্যবসায়িক আইডিগুলো ফেরৎ দেওয়া হয়নি। বরং আইনি আশ্রয়ে যাওয়ায় হত্যার হুমকি দিয়ে ইংল্যান্ডে ফেরৎ যেতে বলা হয়েছে হ্যাকারদের পক্ষ থেকে।
এই ঘটনায় বরিশাল নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ইংল্যান্ডের নাগরিক সাব্বির খান ডিকেন্স বাংলাদেশে এসে ঢাকার রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইমামুল হক হোসেন, রাফি আহমেদ, অপলা আহমেদ সেজুতি ওরফে আরিশা আহমেদ ও ফারিয়া তাসনিম এর নাম উল্লেখ করে এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত আসামী করেন।
সাব্বির খান ডিকেন্স জানায়, মামলা দায়েরের পর ব্রিটিশ হাইকমিশন অফিসের চাপে পুলিশ মামলার ৩ নম্বর আসামী অপলা আহমেদ সেজুতিকে গ্রেপ্তার করে এবং গ্রেপ্তারকৃত সেজুতিকে জিজ্ঞাসাবাদে সাইবার অপরাধের কথা স্বীকার করে।
ডিকেন্স জানায়, ২০২২ সালে লন্ডনে থাকাকালীন ওয়ালমার্ট ও অ্যামাজনে গ্রোসারী স্টোর খোলার পাশাপাশি আমেরিকা মার্কেটে অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকি। এসব ব্যবসা পরিচালনার জন্য মেইল, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটক মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা হয়।
মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামী অপলা আহমেদের সাথে ইনস্টাগ্রাম আইডির মাধ্যমে পরিচয় হয়। এরপর তার আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়ে চাকুরীর প্রয়োজন বলে জানায়। এরই মধ্যে ডিকেন্স তার অনলাইন ব্যবসার নানা বিষয় নিয়ে অপলার সাথে আলাপচারিতা করেন। একপর্যায়ে অপলা বাংলাদেশে ডিকেন্সের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর অপলা আহমেদ বেশ সুচতুর ভাবে ডিকেন্সের ব্যবসায়ীক আইডি সম্পর্কে ধারণা নেয়।
ডিক্ন্সে জানায়, গত বছরের ১৯ অক্টোবর লন্ডনে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বসে তার মুঠোফোনে দেখতে পায় তার সকল ব্যবসায়ীক আইডি সহ ব্যবসা ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত ব্যাংক একাউন্ট, লন্ডনের ই পাসপোর্ট, লন্ডনের ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ আমার লন্ডনের বাসার ওয়াইফাই লাইন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ইউটিলিটি বিল, ব্রিটিশ স্টক মার্কেট সহ আমার সকল ডিজিটাল ডিভাইস হ্যাক করে কেউ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।
পরবর্তীতে লন্ডনে পৌছানোর পর হ্যাককৃত সকল কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করলে দেখতে পাই বাংলাদেশের তেজগাও এর ইফাদ টাওয়ার, বাড্ডা নূরের চালা, রয়েল কসমেটিকস এবং গাজীপুরের টঙ্গী নলজালী বাজার এলাকা থেকে আমার সকল আইডি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই সব বিষয়ে আরো ঘাটাঘাটি করে জানতে পারি হ্যাকার চক্রটি আমার আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন গিফট কার্ড, গেমিং প্লাটফর্ম একাউন্ট খুলেছে। আমার আইডেন্টিটি ব্যবহার করে ইউরোপ ও কানাডার বিভিন্ন ব্যাংকে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও বিট কয়েন ক্যাশ করেছে ।
ডিকেন্স আরও বলেন, আমি যাতে কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারি এই জন্য হ্যাকার চক্র আমাকে জিম্মি করার চেষ্টা করছে। আমার পরিচিত ও আত্মীয় স্বজনদের ফোন হ্যাক করে মোবাইলগুলোতে পেগাসাস নামক হ্যাকিংস টুল ব্যবহার করে গনউপদ্রব সৃষ্টির মত মারত্মক অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সাব্বির খান বলেন, সকল আইডি ফেরৎ দেওয়ার কথা বলে চক্রটি আমার কাছ থেকে সিটি ব্যাংক, বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ১৮ লক্ষ টাকা নিয়েছে। পরে আরও ৪ লক্ষ টাকা চাইলে সেটা না দেওয়ায় নানা ভাবে হত্যার হুমকি দেওয়া শুরু করেছে।
ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক সাব্বির খান ডিকেন্স মামলা দায়েরের পর একজন আসামী গ্রেপ্তার হয় এবং ঢাকা মহানগররের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বরাবর আসামী কোর্টে প্রেরণ প্রসঙ্গে চলতি বছরের ৯ এপ্রিলের চিঠিতে ডিএমপির সিটিটিসির সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ই ফ্রড ইনভেস্টিগেশন টিমের সাব ইন্সপেক্টর ইয়াছিন মিয়া উল্লেখ করেন ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা থেকে গ্রেপ্তারকৃত আসামী সাইবার অপরাধের বিষয়ে স্বীকার করেছেন এবং সে জামিনে মুক্তি পেলে চিরতরে পালানোর সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতর কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ এবং একটি আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স জব্দ করা হয়েছে।
দ্বৈত নাগরিক সাব্বির খান ডিকেন্স বলেন, বরিশালে আমি নতুন ব্যবসা চালু করতে চেয়েছিলাম। আমার বয়স ২৯, তরুন উদ্যেক্তা হিসেবে বরিশালের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরী করতে চেয়েছিলাম। তবে প্রতারক ও হ্যাকার চক্রের খপ্পরে পরে সেগুলোও কিছু করতে পারছি না। তারা সব সময় ডিজিটালী আমাকে হ্যারাজ করছে। স্মার্ট ফোন বাদ দিয়ে এখন আমার এনালগ মোবাইল চালাতে হচ্ছে। তবে তা করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। আমি যাকেই কল করি তার ফোনই হ্যাক করছে চক্রটি। এরকম শুধু আমার সাথে করেছে বলে মনে হয় না, এদের খপ্পরে সর্বস্ব হারাতে পারে অনেক তরুণ উদ্যেক্তাই। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই এবং এই ভয়ানক হ্যাকার চক্রের বিচার চাই।