৪০১ প্রতিমা নিয়ে রাজ মন্দিরে দুর্গোৎসবের বৃহৎ আয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  গোটা বরিশাল বিভাগে ৪০১টি প্রতিমা নিয়ে  সব থেকে বড় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার রাজ মন্দিরে। এরইমধ্যে প্রতিমা তৈরিসহ পূজার আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

আয়োজকরা জানান, বিগত ৩ মাস ধরে ৬ জন সহযোগীকে নিয়ে ৬ জন শিল্পী রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এ কাজ শেষ করেছেন। এবারের আয়োজনে বিগত বছরের সঙ্গে নতুন অনেক কিছুই যুক্ত হচ্ছে। যেমন বিগত বছরগুলোর মতো এবারও দুর্গাপূজা যে কয়দিন চলবে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হবে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের জন্য খাবারের পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হবে।

অসহায়, দুস্থ নারীদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ এবং দরিদ্র-মেধাবী ও কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা-মাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।এছাড়া মন্দির এলাকায় থাকছে চিকিৎসা ক্যাম্প ও শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য ব্রেষ্ট ফিডিং কর্নার। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্যচিত্র নিয়ে বই কর্নার বা লাইব্রেরি স্থাপনের পাশাপাশি পদ্মা সেতু স্পেনের আদলে বানানো গ্যালারিতে লোকসংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

রাজ মন্দিরের বৃহৎ পুজার উদ্যোক্তা ডা. সুদীপ কুমার হালদার বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী ডাঃ স্নিগা চক্রবর্তী এই বৃহৎ পূজার আয়োজনের উদ্যোক্তা। আমার বাবা- মা, ভাই-বোন-বোন জামাই মিলেই সবকিছু ম্যানেজ করছে।তিনি বলেন, প্রতিবছর রাজ মন্দিরের দুর্গাপূজার আয়োজনে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটে। আর আগতদের সেবায় ডাক্তার বাড়ির সব লোকজন নিজেদের নিয়োজিত করেন। গত একমাস ধরে আমাদের ৩০ জন আত্মীয়-স্বজন পূজার আয়োজনকে কেন্দ্র করে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, এবারও সার্বিক নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নিজস্ব শতাধিক ভলান্টিয়ার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। পূজা শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন আগতদের উদ্দেশে প্রসাদের ব্যবস্থা করা হবে। রাজ মন্দিরের পাশেই নারী ও শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কাউন্সিলিং পয়েন্ট ও ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, পূজা চলাকালে টানা চারদিন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দুর্গাপূজার এ আয়োজনে মন্দিরে ৪০১ টি প্রতিমার রয়েছে এবার। যেখানে মহাভারত, রামায়নের সমস্ত পৌরানিক কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। মন্দিরের সীমানায় প্রবেশের সাথে সাথে দেখা মিলবে শ্রী-কৃষ্ণের রাসলীলা, তার নীচেই রয়েছে লোক সংস্কৃতি, ডান পাশে থাকবে আদি শক্তি- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব এদের প্রতিমা। এরপর মা কালী মন্দির, এরপরেই শ্রী কৃষ্ণসহ বিভিন্ন প্রতিমা। পুরো মন্দির ঘুরে অনেক কিছুই দেখতে পাবেন এখানে। ঐতিহাসিক অনেক কিছুই রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে মা দুর্গার প্রতিমা, মা সরস্বতীর মন্দির, মতুয়া ধাম, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রক্ষ্মচারীর মন্দির, মা মনসা’র মন্দির, ধর্মরাজ- জমরাজের প্রতিমাও রয়েছে।

রাজ মন্দিরের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু শৈলেশ্বর হালদার বলেন, বিগত বছরগুলোর মতো এবারেও আমরা চাই উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে পূজার আয়োজন শেষ করতে। এরইমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে।

অপর আয়োজক নমিতা হালদার বলেন, তার চার সন্তানসহ স্বজনদের অংশগ্রহণে কয়েক বছর ধরে বৃহৎ আকারে রাজ মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। আমাদের এখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আসেন পূজা দেখতে।

রাজ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক পলাশ গাইন বলেন, এটা সত্যিই অবিশ্যাস্ব প্রথমে দাদা-বৌদি (চিকিৎসক দম্পতি) মাত্র ৪১ খানা প্রতিমা দিয়ে এই কবুতরখালী গ্রামের ডাক্তার বাড়িতে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু করেছিলো। যা ধীরে ধীরে আজ ৪০১ খানা প্রতিমায় পরিণত হয়েছে। এটা আমার কাছে সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, আমরা খুব আনন্দিত ও উদ্বেলিত।

স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ জানান, এ পূজাকে ঘিরে আশপাশের মানুষদের মধ্যেও বেশ উৎসাহ রয়েছে। এ মন্দিরকে ঘিরে গ্রামীণ মেলাও বসবে। আর দিনে দিনে এত ভিড় বাড়ছে যে আশপাশের সড়কগুলোতেও যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। এদের এ আয়োজনে নতুন প্রজন্ম ধর্মের ওপর আরও শ্রদ্ধাশীল হবে বলে মনে করছি।উল্লেখ্য, নিজের ইচ্ছে ও বাবার মানত পূরণ করার লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ডা. সুদীপ কুমার হালদার কবুতরখালীর ডাক্তার বাড়ির রাজ মন্দিরে গত ২০১৬ সালে ৪১টি প্রতিমা দিয়ে প্রথম বৃহৎ আকারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। এরপরের বছর একশ এবং পরের বছর আড়াইশটি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজনের আকার বড় হতে থাকে। পূজামণ্ডপ এলাকায় বাহারি রংয়ের আলোকসজ্জার মধ্যেই সাজানো হয়েছে প্রতিমাগুলো।

Comments (০)
Add Comment