৫০ বছরের কাফালা পদ্ধতি বাতিল করলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব

অনলাইন ডেস্কঃ আরবের ঐতিহ্যবাহী শ্রম ব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে চলা ‘কাফালা’ বা পৃষ্ঠপোষকতা পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

বহুদিন ধরে এই প্রথার কারণে বিদেশি শ্রমিকদের কাজ ও বসবাস নির্ভর করত নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার ওপর। এই বড় সংস্কারের ফলে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বিদেশি শ্রমিক সরাসরি উপকৃত হবেন। যাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সৌদিতে কাজ করতে গিয়েছেন।

নতুন এই সংস্কারের মাধ্যমে প্রবাসীরা এখন থেকে কাজ পরিবর্তন, দেশ ত্যাগ বা ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রে আগের মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণের মুখে পড়বেন না।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, কাফালা ব্যবস্থার পরিবর্তে দেশটি চালু করেছে চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান মডেল, যা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।

সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)-এর তথ্যমতে, নতুন এই ব্যবস্থায় অভিবাসী কর্মীরা এখন থেকে তাদের বর্তমান নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন, এক্সিট ভিসা ছাড়াই দেশ ত্যাগ, এবং আগে কাফালা কাঠামোর অধীনে প্রাপ্য আইনি সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

এই সংস্কার সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ উদ্যোগের অংশ, যার লক্ষ্য দেশের অর্থনীতিকে আধুনিক করা এবং বিদেশি শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।

এই পদক্ষেপকে একটি ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে সৌদির শ্রম ইতিহাসে ‘একটি নতুন অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছে। তবে সংস্থাগুলোর মতে, প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে এই সংস্কারের বাস্তবায়ন ও তদারকি আরও শক্তিশালী করতে হবে।

‘কাফালা’ শব্দটি আরবি ভাষায় অর্থ ‘স্পন্সরশিপ’। ১৯৫০-এর দশকে উপসাগরীয় অঞ্চলে গড়ে ওঠে এই আধুনিক আইনি কাঠামো। মূলত সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোতে এই কাফালা ব্যবস্থা চালু ছিল।

এই ব্যবস্থার অধীনে অভিবাসী শ্রমিকদের আইনি মর্যাদা সরাসরি তাদের নিয়োগকর্তা বা ‘কাফিল’-এর সঙ্গে যুক্ত থাকত। ফলে নিয়োগকর্তা শ্রমিকের কাজ পরিবর্তন, দেশ ত্যাগ, এমনকি আইনি সহায়তা নেওয়ার বিষয়েও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতেন।

Comments (০)
Add Comment