১৯৮৯ সালের কথা। সংসদের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে মেডিকেল কলেজের বার্ষিকী করবার দায়িত্ব আমার ওপর। আমি তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আমাদের ফার্মাসির অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম স্যার ছিলেন আমার উপদেশক। তিনি বললেন, এই বার্ষিকীতে ছাত্রদের গবেষণার প্রকাশনা রাখতে হবে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। ভাবলাম ছাত্রদের আবার গবেষণাপত্র হয় নাকি।
বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো ছাত্রছাত্রীদের গবেষণাপত্রের জন্য। যা ভেবেছিলাম। একটিও জমা পড়লো না। কিন্তু সাইফুল স্যার নাছোড়বান্দা। ছাত্রদের একটি গবেষণা প্রকাশনা হলেও থাকতে হবে। বড় বিপদে পড়ে গেলাম।
অবশেষে স্যার আমাকে নিয়ে বসলেন। বললেন তোমাকে একটা গবেষণা করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে একটা গবেষণার ব্যাপারে তিনি আমাকে উৎসাহিত করলেন। দুজনে মিলে দু’পাতা জুড়ে প্রশ্নমালা তৈরি করলাম মতামত জরিপের। ছাত্রছাত্রীদের মতামত সংগ্রহ করে সেগুলো আমরা হিসেব নিকেশ করে একটি গবেষণাপত্র হিসেবে প্রকাশ করলাম। স্যার আমাকে মেডিকেল বায়ো স্ট্যাটিসটিক্স ও রিসার্চের ওপর একটি বইও পড়তে দিয়েছিলেন সে সময়।
সেই প্রকাশনাটি দৈনিক আজাদীর সম্পাদকের হাতে পড়ে যায়। তিনি বেশ প্রশংসা করে সেটি দৈনিক আজাদীতে ছেপেও দেন। ব্যাপারটি আমাকে ভীষণ উৎসাহিত করেছিল সে সময়।
সাইফুল স্যারের কাছে গবেষণার হাতেখড়ি আমার। সে সময় মাইক্রোসফট এক্সেল বা কোন রিসার্চ সফটওয়্যার ছিল না। পাই চার্ট বা গ্রাফ করাও সহজ ছিল না। তবে স্যারের হাতে পাওয়া সেই শিক্ষা সারাজীবন কাজে লেগেছে।
শিক্ষার যে কোন শাখায় গবেষণা এবং তার প্রকাশনা একটি অপরিহার্য অঙ্গ। ছোট ছোট গবেষণা থেকে বড় বড় গবেষণার ডালপালা গজায়।আর তাই মেডিকেল কলেজের শুরু থেকে ছাত্রদের গবেষণায় হাতেখড়ি দিতে হবে।
আমাদের সেন্টারে যেসব ছাত্র ছাত্রী, এক্সটার্ন বা রেসিডেন্টরা কাজ করতে আসে তাদেরকে আমি গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ করি। এবং প্রকাশনাতে সাহস দেই।
সাধারণত বৃহস্পতিবার তাদের সাথে জুম মিটিং করে তাদের গবেষণা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। কখনো কখনো বিখ্যাত গবেষকদের আমন্ত্রণ করি তাদের উৎসাহ দেবার জন্য।
আমাদের Planatary Health Academia নামে একটি গ্লোবাল লার্নিং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খুব শিগগিরই বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের এ ব্যাপারে সহায়তা করবো আমরা।
আমাদের সবার হোক আজীবন শেখার আর শেখাবার মানসিকতা।