অনলাইন ডেস্ক: সোমালিয়ার জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ উদ্ধারে কৌশলী হতে চায় জাহাজটির মালিকপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলেন, মুক্তিপণের পরিমাণ বাড়াতে সময়ক্ষেপণের কৌশল গ্রহণ করবে দস্যুরা। তাই এ ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে গেলে বা তড়িঘড়ি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
মুক্তিপণ হিসেবে জলদস্যুদের ৫০ লাখ ডলার দাবির বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সঠিক নয়—উল্লেখ করে এমভি আবদুল্লাহর মালিক এসআর শিপিং লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানায়, জলদস্যুদের সঙ্গে তাদের এখনও কোনো ধরণের যোগাযোগই হয়নি। মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অবান্তর। তবে মুক্তিপণ দেওয়ার চেয়ে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ মেরিন মার্কেন্টাইল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) কর্মকর্তা শওকত হোসেন ইত্তেফাককে জানান, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার উপকূলীয় গারাকাড পয়েন্ট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নোঙ্গর করেছে। জাহাজের কোনো জলদস্যুই এখনো পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, তারা আরও দু-তিনদিন সময় নেবে। এরপর তারা হয়তো যোগাযোগ করবে। জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। ২০১০ সালে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি জাহামনি জাহাজের অবস্থান একই স্থানে শনাক্ত করা হয়েছিল বলে বিএমএমওএ সূত্র জানায়।
এদিকে, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি উদ্ধারে জাহাজটির বিমাকারী যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে জাহাজের মালিকপক্ষ। তবে সব প্রক্রিয়া শেষ করে নাবিকসহ জাহাজ উদ্ধারে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দস্যুরা কিছুটা সময় নেয়, যাতে মালিকপক্ষ চাপের মধ্যে পড়ে। তড়িঘড়ি দাবি পূরণ করা হলে মুক্তিপণের শর্ত ও টাকার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। আবার চাহিদামত টাকা না পেলে নাবিকদের হত্যা করতে পারে।
জানা গেছে, কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন এই জাহাজটি তিন মাস আগে গ্রুপের বহরে যুক্ত করা হয়। জাহাজটি দস্যুতাপ্রবণ বা যুদ্ধরত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় চলাচল করে বিধায় আন্তর্জাতিক বীমা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ প্রিমিয়ামে বীমা করা হয়। এ কারণে জলদস্যুদের মুক্তিপণ প্রদানে মালিকপক্ষকে বড় ধরণের চাপের সম্মুখীন হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মুক্তিপণ দেওয়ার চেয়েও নাবিকদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে কবির গ্রুপ।
চট্টগ্রামের এক বীমা কর্মকর্তা জানান, বীমাকারী প্রতিষ্ঠানই মূলত এসব ক্ষেত্রে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জলদস্যুদের পক্ষ হয়ে মুক্তিপণের দাবি নিয়ে দর কষাকষির জন্য অনেকগুলো মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সমঝোতা হলে মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ ও নাবিকদের ছেড়ে দেয় দস্যুরা। তবে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ উদ্ধারে কতদিন লাগবে—তা নির্ভর করে দস্যুদের সঙ্গে কতটা দক্ষতার সঙ্গে দরকষাকষি করা হয় তার ওপর। কারণ টাকার অঙ্ক বাড়ানোর জন্য দস্যুরা নানা কৌশলে সময় বাড়ায়।