স্টাফ রিপোর্টার : দ্বিতীয় দিনও বরিশাল নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদের উত্তাপ কমেনি। বাস চালক ও শ্রমিকদের ওপর বহিরাগতদের হামলার পর থ্রি-হুইলার চালকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর রোববার (৫ মে) থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সেখানে।
দিনভর অনেকটাই পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ছিল বাস ও থ্রি হুইলার চালকদের।
এমন পরিস্থিতিতে সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো বাস চলাচল করেনি। দূর পাল্লায় অল্প কিছু বাস ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। দুপুরে অবশ্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক বলে জানানো হয়।
দুপুর ২টার দিকে কথা হলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. ফারুক হোসেন বলেন, বাস টার্মিনালে কোনো সমস্যা বর্তমানে নেই। বাস ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় সেখানে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
তিনি বলেন, রোববার সকাল থেকে দূরপাল্লার বাস যথানিয়মে চলাচল করেছে। দুপুর থেকে অল্প বিস্তরে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল শুরু করে। বাস চলাচল নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা হয়েছে তারা জানিয়েছে তাদের কোনো সমস্যা নেই।
অভিযোগ উঠেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্রমিকদের একটি পক্ষ নথুল্লাবাদ এলাকায় দেশিয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। বেশ কয়েকজন শ্রমিককেও মারধর করা হয়। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন সাংবাদিক হেনস্থার শিকার হন।
বাস শ্রমিকরা জানান, শনিবার বহিরাগতদের হামলার পর অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখে শ্রমিকরা। রাতে থ্রি হুইলার শ্রমিকদের সাথে বাস শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে যখন থমথমে অবস্থা টার্মিনাল এলাকায় ঠিক তখন রোববার দুপুরের দিকে নথুল্লাবাদ টার্মিনালে কিছু বহিরাগত যুবক ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে। তখন তারা বেশ কিছু পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে ভাংচুর চালায় এবং কয়েকজন শ্রমিককে মারধর করে। যার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। অবশ্য, তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। আর এর পরপরই বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ানের লোকজন গোটা টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে টার্মিনাল এলাকা থেকে একটি মিছিলও বের করা হয়। সেই মিছিলটি বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে গেলে সেখান থেকে লিমন ও জাহাঙ্গীর নামে দুই যুবককে পুলিশ আটক করে। যাদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি দেশিয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠি উদ্ধার করা হয়। আর এরপরপরই অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল শুরু হয়।
দুজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শনিবার সকালে বাস চালক ও শ্রমিকদের ওপর বহিরাগতদের হামলা এবং সন্ধ্যায় বাস শ্রমিক ও থ্রি হুইলার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুরের ঘটনায় পৃথক তিনটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছে থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. ফারুক হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগগুলো এখনও মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। প্রতিটি অভিযোগের ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নথুল্লাবাদ টার্মিনালে বহিরাগতদের আধিক্য কমাতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেও বলে জানান তিনি।
বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রবাস শ্রমিক ইউনিয়নের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি কাজী কবির আহমেদ জানান, স্বাভাবিকভাবে বাস চলাচলের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবের। আমরা বাস টার্মিনাল এলাকায় সর্বোচ্চ শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছি।
শনিবারের থ্রি হুইলার চালকদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা করেননি জানিয়ে সভাপতি কাজী কবির জানান, আলফা নামক থ্রি হুইলারের শ্রমিকদের সাথে বহিরাগতরা প্রবেশ করে ওই ঝামেলার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। যেখানে আমাদের বাস শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে, ৭-৮ জন হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। এ ঘটনায় আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, আমাদের শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটির বিরুদ্ধে কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মোল্লা লিটন রয়েছেন। তিনি নথুল্লাবাদ টার্মিনালে এসে আমাদের কমিটিকে বানচাল করার পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে সংগঠন পরিচালনা না করতে পারি সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। শনিবার এরা কি করেছে সবাই দেখেছে এখনও নানান ধরণের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, থানায় যে তিনটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কামাল হোসেন মোল্লা লিটনের একটি রয়েছে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ। এদিকে রোববার টার্মিনাল সংলগ্ন পুলিশ বক্সের পাশ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় অর্ধশত লাঠি ও সিমেন্টের টুকরা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।