নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে বর্তমান মেয়র সাদিক ও নবনির্বাচিত মেয়র খোকন অনুসারী শ্রমিকদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, সড়ক অবরোধ, ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে।
এর আগে প্রথমে সদ্য গঠিত মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত খোকন অনুসারী শ্রমিক নেতা আফতাব হোসেনের নেতৃত্বে শ্রমিকরা কিছুক্ষণের জন্য ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এরপরই শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের দাবিতে টার্মিনালের মধ্যে প্রবেশ করেন সাদিক অনুসারী শ্রমিক নেতা কালাম হোসেন লিটন মোল্লা। এসময় বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিক লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি খোকন সমর্থিত আফতাব হোসেনের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে সাদিক অনুসারী শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে ফের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় হামলাকারী আফতাব অনুসারীদের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়ে তাদেরকে মারধর করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
এসময় শ্রমিকরা নথুল্লাবাদ টার্মিনালের ভেতরে বেশ কয়কটি টিকিট কাউন্টার ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। সংঘর্ষে দুই গ্রুপের অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হন। প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ থাকার পর প্রশাসনের অনুরোধে তা তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে টার্মিনাল এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে মহানগর শ্রমিকলীগের একতরফা কমিটি ঘোষণা অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেন সাদিক বিরোধীরা।
এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত অনুসারী মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি থেকে বাদ পরা সদ্য সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেন।
এর কিছুক্ষণ পরে সাদিকপন্থী শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন লিটন মোল্লা মিছিল নিয়ে টার্মিনালে প্রবেশ করেন। তখন তিনি বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহণ (বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস) শ্রমিক ইউনিয়নে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান। এরপরই আফতাব হোসেন অনুসারীরা লিটন মোল্লাসহ তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালায়। এরপর দ্বিতীয় দফায় সড়ক অবরোধ করেন লিটন মোল্লার অনুসারীরা। এসময় টার্মিনালের মধ্যে আফতাব অনুসারীদের ধরে মারধর করেন লিটনের অনুসারীরা। এই সংঘর্ষের সময় বাস কাউন্টারের আসবাবপত্র এবং কয়েকটি মোটর সাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এবিষয়ে মহানগর শ্রমিক লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের বিতর্কিতদের দিয়ে মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা ঐ কমিটির বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ জানালে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সাদিকপন্থী লোকজন।
সাদিক অনুসারী শ্রমিক নেতা লিটন মোল্লা বলেন, আমরা শ্রমিক লীগের কমিটির বিষয় নিয়ে এখানে আসিনি। আমরা জেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনসহ ৬ দফা দাবি জানাতে টার্মিনালে এসেছি। কিন্তু কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আফতাব হোসেন ও তার লোকেরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমরা এই ঘটনার বিচার দাবি করছি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আলী আশ্রাফ ভূঁইয়া বলেন, দুই গ্রুপের মধ্য অভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমরা নেতাদের বলেছি দ্বন্দ্ব দূর করতে। দুই পক্ষের শ্রমিকদের বাস টার্মিনাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নথুল্লাবাদের পরিস্থিতি পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাছাড়া টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের ২৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠনের সংবাদ শুক্রবার প্রকাশ হওয়ার পর বিক্ষোভ করে পদবঞ্চিত খোকন অনসুারীরা। এই কমিটির সভাপতি করা হয় সাদিক অনুসারী পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক হন রইজ আহম্মেদ মান্না। কমিটির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদ সাদিক অনুসারীদের দখলে থাকায় পদবঞ্চিতরা সকালে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ-অবরোধ করলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।