নাম তার ইদ্রিস মৌলভী, বয়স হয়েছে ৯৫। নিজের চল্লিশ বছর বয়স থেকে মৃত মানুষের গোসল থেকে শুরু করে দাফন-কাফন করে আসছেন। যার বিনিময়ে কোনো টাকা-পয়সা নেন না তিনি। এ যেন মানুষের অন্তিমযাত্রায় পরম বন্ধুর পরিচয়।
ভোলার লালমোহনের পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ইলিশাকান্দি গ্রামের মৌলভী বাড়ির বাসিন্দা এই ইদ্রিস মৌলভী। তার ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের মোয়াজ্জিনের দায়িত্বও পালন করছেন।
জীবনের প্রায় ৫৫ বছর মানুষ মৃত্যুর খবরে দাফন-কাফন করতে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। দীর্ঘ ৫৫ বছরে প্রায় সহস্রাধিক মৃত ব্যক্তির লাশ নিজের হাতে গোসল করিয়ে দাফন করিয়েছেন। উপজেলার ইলিশা কান্দি, রায়পুরা কান্দি, বালামচরা কান্দি, পাঙ্গাশিয়া, গজারিয়া ও কর্তারহাট এলাকায় মানুষের মৃত্যুর খবরে রাত-বিরাত ছুটে যাচ্ছেন ইদ্রিস মৌলভী। এছাড়াও পাশ্ববর্তী উপজেলা চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জ, দুলারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় মৃত মানুষের দাফন করে বেড়ান তিনি।
ইদ্রিস মৌলভীর ছেলে ইউসুফ বলেন, বাবাকে এই মহতী কাজের জন্য কখনও পরিবার থেকে বাধা দেয়া হয়নি। এ কাজে তাকে সব সময় উৎসাহ দেয়া হয়েছে। মানুষের শেষ বিদায়ে আমার বাবা পাশে থাকতে পারছেন এটা সত্যিই আমাদের থেকে ভালো লাগে।
তবে; এখন তত ভালো নেই ইদ্রিস মৌলভী। শারীরিকভাবে অনেকটা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন তিনি।
শরীরজুড়ে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। চোখেও দেখা দিয়েছে সমস্যা। শরীরের বাম পাশের অংশ অনেকটা প্যারালাইজড হয়ে গেছে। এখন আর মানুষের মৃত্যুর খবরে আগের মত যেতে পারছেন না ইদ্রিস মৌলভী। টাকার জন্য নিজের শারীরিক চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তিনি।
মানুষের কাছে চিকিৎসা করাতে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে ইদ্রিস মৌলভী বলেন, শরীর যখন ভালো ছিল, তখন অনেক মানুষের লাশের গোসল থেকে শুরু করে দাফন করেছি। বিনিময়ে কারও থেকে কখনও টাকা-পয়সা নেইনি। তবে এখন শরীর তত ভালো নেই। টাকার জন্য চিকিৎসাও করাতে পারছি না। তাই নিজের শেষ সময়ে শরীরের চিকিৎসা করাতে সমাজের বিত্তবান মানুষের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লালমোহন উপজেলা ফিল্ড সুপার ভাইজার মো. আল-মামুন বলেন, যারা বিভিন্ন এলাকায় মৃত মানুষের দাফন-কাফনের কাজ করেন, তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সহায়তার ব্যবস্থা নেই। এসব মানুষদের জন্য সরকারিভাবে সহায়তার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করছি।