আমুর হস্তক্ষেপে ঝালকাঠি উপজেলা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের
প্রার্থীসহ আহত ৭০, নির্বাচনী মাঠে বহিষ্কার হচ্ছে দলের নেতাকর্মী
রবিউল ইসলাম রবি : আগামী ২১ মে ঝালকাঠি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপেক্ষা করে আমির হোসেন আমু নির্বাচনে তার পছন্দের আনারস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ঘোষণা করেছেন।
তার পছন্দের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ ছাড়তে বাধ্য করছেন। অন্য প্রার্থীর পক্ষে যাওয়া স্থানীয় নেতাকর্মীদের কৌশলে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। আনারস মার্কা সমর্থিত নেতাকর্মীদের হামলায় প্রতিদ্বন্দ্বী দোয়াত কলম মার্কা প্রার্থীসহ আহত হয়েছে প্রায় ৭০ নেতাকর্মী। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে এমপি আমু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ করে সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয়ার অভিযোগে পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ মে) দুপুর সাড়ে ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) বীর মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এবং বিকেল সাড়ে ৩ টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সংবাদ সম্মেলনটি করেছেন দোয়াত কলম মার্কার প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ রাজা রফিকুল ইসলাম। অপরটি করেছেন দোয়াত কলম মার্কার সমন্বয়কারী আহত ব্যারিস্টার এস.এম গোলাম সাহরিয়া ও এ্যাড. রুহুল আমিন রেজভী।
সমন্বয়কারীরা লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যসহ তথ্য প্রমাণের বিশ্লেষণে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্তরে উঠে এসেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক ঘোষিত নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই ঝালকাঠি সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঝালকাঠি জেলা আ.লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান হোসেন খান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। স্থানীয় এমপি আমির হোসেন আমু তার পছন্দের আনারস মার্কা প্রার্থী খান আরিফুর রহমানের পক্ষ হয়ে নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন। মনোনয়ন দাখিল করার পর থেকেই দোয়াত কলম মার্কা প্রার্থী সুলতান হোসেন খান সহ তার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের উপর চিহ্নিত ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীরা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে।
এমন পরিস্থিতে দোয়াত কলম মার্কা প্রার্থী তথ্য প্রমাণ সহ নির্বাচন কমিশন, জেলা রির্টানিং অফিসার বরাবর, জেলা প্রসাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিত এবং মৌখিকভাবে জানান। এমনকি গত ২৯ এপ্রিল সুলতান হোসেন খান জেলা রির্টানিং অফিসার বরাবর ‘ঝালকাঠি ২ আসনের এমপির আচরণ বিধি বর্হিভূত কার্যকলাপ প্রসঙ্গে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। আবার গত ৩০ এপ্রিল সুলতান হোসেন খান ‘বাংলাদেশ আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদ’ এর সভাপতি/সম্পাদক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
গত ৫ মে সুলতান হোসেন খান জেলা রির্টানিং অফিসার বরাবর নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাস্তবায়নসহ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি আবেদন করেছিলেন। রফিকুল ইসলাম পরিষ্কার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন দল নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহে আলম, সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন। এমনকি আনারস প্রতীকের প্রার্থী আরিফুর রহমানের সমর্থক উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আল মাহমুদ, জেলা যুবলীগের আহবায়ক রেজাউল করিম জাকির, যুগ্ম আহবায়ক ও কাউন্সিলর কামাল শরীফ, জেলা ছাত্ররীগের সভাপতি মধুর নেতৃ
ত্বে নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে দোয়াত কলম মার্কা প্রার্থীসহ সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করতে চাইছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় হঠাৎ ১৪ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় ঝালকাঠি পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড রামনগর কীর্ত্তিপাশা মোড়ে পৌঁছা মাত্রই দোয়াত কলমের সমর্থকদের উপর হামলা চালায় আনারস মার্কা প্রার্থী খান আরিফুর রহমান (৫৮), মোঃ রেজাউল করিম জাকির (৪৭), মোঃ কামাল শলীফ (৪৭), মোঃ হাফিজ আল মাহমুদ (৪৩), আবদুল্লাহ আল মাসুদ মধু (২৬), তরিকুল ইসলাম পারভেজ (২৮), ফারসু (৪০), মোঃ ইদ্রিস শরীফ (২৫), বাবু (২৪), লিসান (২৫), সানি (২৪), আলফি শাহরুন শুভ (২৪), রুবেল (৩৫), মেস্তোফা কামাল বাবুল (৫৪) , মোঃ ফাইজুল হক জুয়েল (৪৫), আঃ কাইউম (২৯), মুসা (৩০), সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৮০/৯০ জন। সিংহভাগ হামলাকারীরা সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর অনুসারী ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আনারস মার্কা প্রার্থী খান আরিফুর রহমানের সমর্থক যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। এ হামলায় আহত হয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দোয়াত কলম মার্কা প্রার্থী সুলতান হোসেন খান, কেন্দ্রীয় আ.লীগের পরিবেশ উপ-কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এস.এম গোলাম সাহরিয়া, জেলা আ.লীগের আইন সম্পাদক এ্যাড. রুহুল আমিন রেজভীসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ হামলায় দোয়াত কলমের প্রায় ৭০ নেতা কর্মী আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় মোঃ হোমায়েত উদ্দিন খান বাদী হয়ে উপরোক্তদের বিরুদ্ধে ঝালকাঠি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর ঘোষিত প্রার্থী আনারস মার্কার বাহিরে গিয়ে অন্য প্রার্থীর নির্বাচন করায় আ.লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন ঝালকাঠি সদর থানা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজগর মল্লিক।
নবগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য মোঃ তসলিম উদ্দিন মৃধা। পোনাবালিয়া কৃষক লীগের সভাপতি/সম্পাদক মোঃ শাহিন আকন ও শাহজাহান মাঝি। কীর্তিপাশা কৃষকলীগের সভাপতি মোঃ ফরিদ হোসেন। নথুল্লাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ তালুকদার। ঝালকাঠি জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিলদার আহমদ নবীন। কেওড়া ইউনিয়ন আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ শাহ আলম মিরবর। কীর্তিপাশা ৪নং ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি/সম্পাদক মোঃ হোসেন আলী হাওলাদার ও সুজিত ঘরামী। গাবখান ধাঁনসিড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস হোসেন। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন মোঃ আজগর মল্লিক। ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, এ সব ঘটনার সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। স্থানীয় পর্যায় তাকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
বিশ্বস্ত এক সূত্র নিশ্চিত করে বলেন, ঝালকাঠি-২ আসনের সাংসদ আমির হোসেন আমু বুধবার (১৫ মে) দুপুরে বরিশাল বাসভবনে এসে পৌঁছেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রভাব বিস্তার করেছে এমন অভিযোগের বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা রির্টানিং অফিসার মোহাঃ আঃ ছালেক বলেন, তিনি বর্তমানে নির্বাচনী এলাকায় নেই। সুতরাং তার বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোড় তোলা সঠিক নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনে আমরা বদ্ধ পরিকর। নির্বাচন কমিশন কারো পক্ষে কাজ করছে না। আমাদের কাছে যতগুলো অভিযোগ এসেছে তার সবগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ১৪ মে সন্ধ্যার ঘটনা আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আনারস মার্কা প্রার্থী খান আরিফুর রহমান এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার রিং দিলেও ধরেননি।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছি। এরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরুন শুভ, ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ ও তুহিন হাওলাদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।