Take a fresh look at your lifestyle.

সীমান্তে কাটেনি আতঙ্ক, পালিয়ে আসা ১০০ জনকে টেকনাফে স্থানান্তর!

অনলাইন ডেস্ক: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে গতকাল ভেসে আসেনি কোনো গুলির শব্দ। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে টানা যুদ্ধের পর হঠাৎ যেন শান্ত হয়ে গেছে পরিস্থিতি। তবে আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তে। যে কোনো সময় আবার ওপার থেকে গুলি বা মর্টার শেল ছুটে আসার আশঙ্কায় বাড়িতে ফেরেনি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে তারা আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ও স্বজনের বাড়িতে।

এদিকে গতকাল বেলা ১১টায় ঘুমধুমের নয়াপাড়া থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় একটি মর্টার শেল উদ্ধার করে বিজিবি। এলাকাবাসী জানায়, সকালে হঠাৎ নয়াপাড়ার মোহাম্মদ আলমের ঘরের পাশে গোলপাতার বনে মর্টার শেলটি এসে পড়ে। কয়েকজন রোহিঙ্গা শিশু মর্টার শেলটি দেখতে পায়। পরে শিশুগুলো মর্টার শেলটি কুড়িয়ে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছিল। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ঘুমধুম ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা এসে মর্টার শেলটি উদ্ধার করেন।

পালিয়ে আসা ১০০ জনকে টেকনাফে স্থানান্তর : কিছুদিন ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলছে মিয়ানমার সরকারি বাহিনী। আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ৩২৮ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে ও উখিয়ায় পালিয়ে আসেন। পরে আরও দুজন পালিয়ে এলে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩০-এ। এর মধ্যে ঘুমধুমে ২২৮ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের খাওয়া, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করা হয়। ঘুমধুম সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া বিজিপির ১০০ জনকে গতকাল টেকনাফের হ্নীলায় বিজিবি বিওপি ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ওই বিজিপি সদস্যদের হ্নীলা বিজিবিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের গভীর সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার তাদের শিপের রুট প্ল্যান জানাবে এবং কোন শিপ আসবে, তারা বিস্তারিত জানাবে। তবে এখন পর্যন্ত ওখান থেকে প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।’

 

সীমান্তে অবাধ যাতায়াত বাতিল ভারতের : এদিকে মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে গত মঙ্গলবার নাগরিকদের মিয়ানমার ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিল ভারত। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে অবাধ চলাচল বা ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ বাতিল করেছে নয়াদিল্লি। গতকাল এক বিবৃতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম বাতিল করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, ভারতের মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল ও নাগাল্যান্ড রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের। এতদিন পর্যন্ত এসব সীমান্ত দিয়ে দুই দেশের নাগরিকরা কোনো নথিপত্র ছাড়াই সীমান্ত পেরিয়ে উভয় দেশের ভিতর ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত চলাচল করতে পারত। এখন থেকে আর সে সুযোগ থাকছে না।

 

 

ইতোমধ্যে মিজোরাম-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে; শিগগিরই মণিপুর-মিয়ানমার, অরুণাচল-মিয়ানমার ও নাগাল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তেও বেড়া নির্মাণ শুরু হবে বলে জানিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে মিয়ানমার অভ্যন্তরের যুদ্ধে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে এখনো চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। যুদ্ধে মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অনেকে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িঘর। ছালবাকল উঠে গেছে বড় বড় গাছের। লোহার দরজা ভেদ করে গুলি ঢুকেছে ঘরে।

 

 

অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাওয়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকার ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার মুহুর্মুহু গুলির শব্দে তার ঘুম ভাঙে। চোখ খুলতেই কিছু বোঝার আগেই একটি গুলি জানালা ভেদ করে ঘরে ঢোকে। খাটের কাঠটি উঁচু হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ গতকাল জানান, সীমান্তের ওপারে গতকাল গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। তবে এখনো আতঙ্ক কাটেনি লোকজনের মধ্যে। আবারও গোলাগুলির শব্দ, মর্টার শেল এসে পড়তে পারে এ আশঙ্কায় সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের কেউ কেউ অবস্থান করছেন নিজ নিজ স্বজনদের বাড়িতে, কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে বাসিন্দারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে আসবেন বলে ধারণা তার।

 

 

বিজিবিসূত্রে জানা যায়, গত সোম ও মঙ্গলবার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের তুমব্রু লেফট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকিতে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিপি ও সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই হয়। এতে আরাকান আর্মি মিয়ানমার সরকারের দুটি স্থাপনা দখল করে নেয়।

 

এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি আরাকান আর্মি তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখল করে নেয়। তখন থেকে কয়েক দফায় বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ৩ শতাধিক সদস্য প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের অনেকেই ছিল গুলিবিদ্ধ ও আহত। বিজিবি তাদের নিরস্ত্র করে থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.